আতঙ্কের রাতে ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী, কোহবার্গারের মামলার গোপন নথি ফাঁস!

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দায়ে ব্রায়ান কোহবার্গার নামে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে নিহত শিক্ষার্থীদের বাড়িতে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছিল, যা সম্প্রতি প্রকাশিত নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০২২ সালের ১৩ই নভেম্বর, ইডাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাইলি গনকাল্ভেস, ম্যাডিসন মোগেন, জানা কার্নোডল ও ইথান চাপিনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার তদন্তে ব্রায়ান কোহবার্গারকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মামলার শুনানির পর বুধবার (২৩শে জুলাই, ২০২৫) আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশ যে নথি প্রকাশ করেছে, তাতে ঘটনার আগে ভিকটিমদের বাড়িতে ঘটা কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে কাইলি গনকাল্ভেস তার রুমমেটদের জানান, তিনি বাড়ির বাইরে তার কুকুরকে নিয়ে যাওয়ার সময় এক অচেনা ব্যক্তিকে তাদের বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং বন্ধুদেরও জানিয়েছিলেন।

এছাড়াও, ঘটনার কয়েক দিন আগে, ৪ঠা নভেম্বর তারিখে, শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে দেখেন তাদের মূল দরজার ছিটকিনি খোলা এবং দরজাটি সামান্য বাঁকানো অবস্থায় রয়েছে। কাইলির বাবা এসে দরজাটি সারিয়ে দেন। এই ধরনের ঘটনাগুলো নিঃসন্দেহে সন্দেহজনক ছিল।

তদন্তকারীরা ঘটনার পরে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। তারা বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করতে শুরু করে। একটি ওয়ালমার্ট-এর কর্মী পুলিশকে জানান, ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে শ্বেতাঙ্গ, কলেজ-পড়ুয়া একজন যুবক মুখ ঢাকার জন্য কালো রঙের একটি মুখোশ খুঁজছিলেন। এছাড়াও, ঘটনার রাতে ভিকটিমদের ফুড ট্রাকের ছবি দেখে অনেকে সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে তাদের ধারণা দেন। এমনকি, ঘটনার রাতে একটি বারে দেখা যাওয়া কিছু লোক এবং ভিকটিমদের প্রায়ই ব্যবহৃত একটি উবার চালকের বিষয়েও তদন্ত করা হয়।

তদন্তকারীরা ব্রায়ান কোহবার্গারকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন। তিনি ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্রাইমোলজির (অপরাধ বিজ্ঞান) ওপর পিএইচডি করছিলেন। ঘটনার রাতে তার মোবাইল ফোনের ডেটা বিশ্লেষণ করে, অনলাইনে কেনাকাটার রেকর্ড পরীক্ষা করে এবং ঘটনাস্থলে পাওয়া একটি ছুরির খাপ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পুলিশ তার গতিবিধি ট্র্যাক করে। পরে, তারা জানতে পারে, কোহবার্গারের গাড়িটি বারবার নিহত শিক্ষার্থীদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল।

গ্রেফতারের পর ব্রায়ান কোহবার্গারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রথমে ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির ফুটবল দল, তার পড়াশোনা এবং শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছার কথা বলেন। পরে, তিনি বুঝতে পারেন যে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের আসল কারণ জানতে চাইছে। তিনি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তার বক্তব্য শেষ করেন।

কারাগারে কোহবার্গারের আচরণও ছিল বেশ অস্বাভাবিক। তার সেলের পাশের এক কয়েদি জানান, কোহবার্গার দিনে বহুবার হাত ধুতেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে গোসল করতেন। তিনি রাতে জেগে থাকতেন এবং দিনের বেলায় সামান্য ঘুমাতেন।

প্রকাশিত নথিগুলো থেকে জানা যায়, এই মামলার তদন্তে পুলিশ প্রতিটি সম্ভাব্য সূত্র খতিয়ে দেখেছে এবং অপরাধীকে শনাক্ত করতে সব ধরনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্য নিয়েছে।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *