শিরোনাম: ব্রাইন টারফেল: ওয়েলসের এক প্রান্তিক খামার থেকে বিশ্ব সঙ্গীতের মঞ্চে
ওয়েলসের প্রখ্যাত ব্যারিটোন শিল্পী ব্রাইন টারফেল। সঙ্গীতের জগতে তাঁর উত্থান এক রূপকথার মতো। উত্তর-পশ্চিম ওয়েলসের একটি ভেড়া খামারে বেড়ে ওঠা এই শিল্পী কিভাবে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছেন, সেই গল্প শুনবো আজ।
ব্রাইন টারফেলের শৈশব কেটেছে পান্ত গ্লাসে, যেখানে সঙ্গীতের আবহ ছিল সবসময়। তাঁর বাবা ছিলেন একজন কৃষক এবং মা কাজ করতেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিদ্যালয়ে। পরিবারের সবাই কোনো না কোনোভাবে সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাড়ির রান্নাঘরের তাকে সবসময় গানের সুর বাজত। ছোটবেলায় ব্রাইন প্রায়ই টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে এলভিস প্রিসলির গান গাইতেন। ওয়েলসের ঐতিহ্যবাহী ‘এইস্টেডফড’ উৎসবে তিনি গান গেয়েছেন, যা তাঁর শিল্পী জীবনের পথ খুলে দেয়। গায়ক হওয়ার স্বপ্নকে সত্যি করতে, তিনি গিল্ডহল স্কুল অফ মিউজিক-এ ভর্তি হন।
সংগীতচর্চায় কঠোর পরিশ্রমের কথা বলতে গিয়ে ব্রাইন জানান, কোনো একটি নতুন গানের অংশ শেখা তাঁর কাছে ভীতির কারণ। তবে, গানটি ভালোভাবে রপ্ত করার পর, তা পরিবেশন করতে তাঁর ভালো লাগে। শ্রোতাদের সামনে একটি পরিপাটি পরিবেশনা দেওয়ার জন্য তিনি সবসময় প্রস্তুত থাকেন।
ব্যক্তিগত জীবনে ব্রাইন টারফেল বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী, হানা স্টোন একজন শিল্পী, যিনি প্রায়ই তাঁর সঙ্গে হার্প বাজান। তাঁদের প্রথম দেখা হয় এস৪সি ক্রিসমাস অনুষ্ঠানে। ব্রাইন মনে করেন, জীবনটা একসঙ্গে সবকিছু উপভোগ করারই নাম। আর এই উপভোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে সঙ্গীত।
নিজের ক্যারিয়ারের শুরুতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো তাঁর জন্য কঠিন ছিল। কারণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য তাঁকে প্রায়ই মাসের পর মাস বাড়ির বাইরে থাকতে হতো। তবে তিনি গর্বিত যে তাঁর সন্তানেরা বাবার গান শোনার সুযোগ পেয়েছে এবং বিশ্বকে নতুনভাবে দেখতে শিখেছে।
ভাষা নিয়ে ব্রাইন কিছুটা আক্ষেপ করেন। তিনি ওয়েলশ ভাষায় কথা বলেন, যা তাঁর মাতৃভাষা। এছাড়া, ইংরেজিও ভালো বলতে পারেন। কিন্তু ইতালীয়, ফরাসি বা জার্মান ভাষা শিখতে তাঁর বেশ বেগ পেতে হয়।
নব্বইয়ের দশকে অনেক শিল্পীই রোদ ঝলমলে আবহাওয়ার কারণে স্পেনে বাড়ি কিনেছিলেন, ব্রাইনও তাদের দলে ছিলেন। কোস্টা দেল সোলে তাঁর একটি বাড়ি আছে, যেখানে তিনি পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। সেখানে তিনি গান বা শব্দ মুখস্থ করার চাপ থেকে মুক্ত থাকেন।
ওয়েলস তাঁর কাছে সবকিছু। পাহাড়, হ্রদ, সমুদ্র সৈকত, দুর্গ – ওয়েলসের সংস্কৃতি তাঁর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। ওয়েলসের মানুষজনও শিল্পী হিসেবে ব্রাইনকে সবসময় সমর্থন জুগিয়েছে। নিউ ইয়র্ক বা মিলানে কোনো অনুষ্ঠানে তাঁর গান শুনতে প্রায়ই ওয়েলসের বহু মানুষকে দেখা যায়।
কিং চার্লসের সিংহাসন আরোহণের সময় ব্রাইন টারফেল গান গেয়েছিলেন। এই অনুষ্ঠানে তিনটি ওয়েলশ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল, যা আগে কখনো শোনা যায়নি। এই অনুষ্ঠানে গান গাওয়াটা ছিল সঙ্গীতের প্রতি রাজার সমর্থনের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেন।
সম্মাননা ও স্বীকৃতি প্রসঙ্গে ব্রাইন জানান, তিনি তাঁর দাদা-দাদীর কথা সবসময় মনে রেখেছেন। তিনি সিবিই এবং নাইটহুড উপাধি লাভ করেছেন। এছাড়া, কুইন’স মেডেল ফর মিউজিক-এর দ্বিতীয় প্রাপক হিসেবেও তিনি সম্মানিত হয়েছেন।
বর্তমানে ব্রাইন টারফেল ‘দ্য ভয়েস’ (ওয়েলশ সংস্করণ)-এর বিচারক হিসেবে কাজ করছেন। সঙ্গীত জগতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ওয়েলসের এই গর্ব বর্তমানে তাঁর কাজের মাধ্যমে সেখানকার সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিচ্ছেন।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান