বৌদ্ধগয়ায় মন্দির নিয়ে হিন্দুদের ‘নিয়ন্ত্রণ’, ফুঁসে উঠলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা!

বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্রতম স্থান বোধগয়ায় হিন্দু ‘নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড়। ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্রতম স্থান বোধগয়ায় মহাবোধি মন্দির (Mahabodhi Temple) নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ চলছে।

এই প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। তাদের প্রধান দাবি হলো, এই মন্দিরের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণরূপে তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।

বর্তমানে মন্দিরটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কমিটির কাঠামো পরিবর্তনের জন্য তারা সরব হয়েছেন। তাদের অভিযোগ, মন্দিরের ব্যবস্থাপনায় হিন্দুদের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে।

বোধগয়া, যেখানে গৌতম বুদ্ধ জ্ঞান লাভ করেছিলেন, সেই স্থানটিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন বৌদ্ধ সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ করছে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, ১৯৪৯ সালের ‘বৌদ্ধ গয়া মন্দির আইন’-এর মাধ্যমে মন্দির পরিচালনায় যে আট সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছে, সেখানে চারজন হিন্দু এবং চারজন বৌদ্ধ সদস্য রয়েছেন।

তারা এই আইনের বিলোপ চান এবং মন্দিরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বৌদ্ধদের হাতে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরে হিন্দু রীতি-নীতির প্রভাব বাড়ছে, যা বৌদ্ধ ধর্মের আদর্শের পরিপন্থী।

তাদের আরও অভিযোগ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়নি।

এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

তারা বলছেন, হিন্দুদের কারণে মন্দিরের পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। প্রতিবাদকারীরা মনে করেন, যেহেতু বুদ্ধদেবের মূল চেতনা ছিল বৈদিক রীতিনীতির বিরোধিতা, তাই কোনো হিন্দুকে এই মন্দিরের কমিটিতে রাখাটা সঠিক নয়।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সম্রাট অশোকের আমলে এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল।

ত্রয়োদশ শতকে তুর্কি-আফগান সেনাপতি বখতিয়ার খিলজির আক্রমণের পর এই অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব কমতে শুরু করে।

পরবর্তীকালে, এক হিন্দু সন্ন্যাসী গয়ামন্দিরে বসবাস শুরু করেন এবং সেখানে হিন্দু রীতিনীতি চালু করেন। এরপর থেকে, এই মন্দিরের নিয়ন্ত্রণভার ধীরে ধীরে হিন্দুদের হাতে চলে যায়।

বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, সরকার এবং সুপ্রিম কোর্ট তাদের দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

তাদের আশঙ্কা, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার তাদের অভিযোগ আমলে নেবে না।

তবে, প্রতিবাদকারীরা তাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ওপর আস্থা রাখছেন।

তাদের মতে, এই ঐক্যের মাধ্যমেই তারা তাদের দাবি আদায় করতে পারবেন।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *