যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে এক মর্মান্তিক ঘটনায় এক বাসচালক, যিনি পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন, তাঁর অসামান্য ত্যাগের জন্য সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। রুয়েজ বেল নামের ৬৩ বছর বয়সী এই পরিবহন চালক, গত ৩০শে এপ্রিল তারিখে যাত্রী বোঝাই একটি বাস চালাচ্ছিলেন।
আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হলেও, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসটিকে রাস্তার পাশে নিরাপদে থামান। এর পরেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, মন্টগোমারি কাউন্টির ‘রাইড অন’ (Ride On) পরিবহন সংস্থার এই চালক ইন্টারস্টেট-355 (Interstate 355) ধরে দক্ষিণে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেও, তিনি যাত্রীদের সুরক্ষার কথা ভেবেছিলেন সবার আগে। রুয়েজ বেলের এই আত্মত্যাগের কারণে তাঁকে এখন সবাই ‘বীর’ হিসেবে সম্মানিত করছেন।
রুয়েজ বেলের সহকর্মী জেনিফার বেকউইথ, যিনি তাঁর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন, এক সাক্ষাৎকারে জানান, “তিনি শুধু পরিবারের কাছেই নয়, পুরো গেদার্সবার্গ ডিপোর কাছেও একজন বীর ছিলেন। আমার চোখে তিনি ছিলেন সুপারম্যান।” জানা যায়, রুয়েজ বেল ২০১২ সাল থেকে মন্টগোমারি কাউন্টিতে পরিবহন চালক হিসেবে কাজ করছিলেন।
তিনি স্থানীয় সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নেরও সদস্য ছিলেন এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন।
বেল-এর কন্যা, জানে বেল, তাঁর বাবার এই আত্মত্যাগের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “বাবা সবসময় অন্যদের কথা আগে ভাবতেন। তিনি বাসটিকে নিরাপদে থামাতে পেরেছিলেন, এটা ভেবে আমি গর্বিত।
আমাদের জন্য এটা খুবই কঠিন একটা সময়, কিন্তু আমি জানি তিনি আমাদের মাঝে আছেন এবং চাইবেন আমরা সবাই শক্তিশালী থাকি। তিনি বাস চালাতে ভালোবাসতেন… সবাই তাঁকে যেভাবে ভালোবাসছে, বীর বলছে, এটা সত্যিই খুব আনন্দের।”
রুয়েজ বেলের আরেক সহকর্মী, ল্যাটিকা ওচিওং, তাঁর এই শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তকে তাঁর চরিত্রের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “নিজের এত বড় একটা কষ্টের মধ্যেও তিনি অন্য মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে ভেবেছেন। আমি মনে করি, মানুষ জানে না পরিস্থিতি অন্যরকম হলে কী হতে পারতো।”
মন্টগোমারি কাউন্টির নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক এলরিচ, রুয়েজ বেলের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “চাপের মধ্যে তাঁর এই শান্তভাব তাঁর ব্যক্তিত্বের গভীরতা প্রকাশ করে।”
রুয়েজ বেল তাঁর স্ত্রী, ছয় মেয়ে এবং চার ছেলে সহ মোট দশজন সন্তান রেখে গেছেন। তাঁর এই আত্মত্যাগ শুধু পরিবার নয়, পুরো সমাজের জন্য অনুকরণীয়।
তথ্য সূত্র: পিপল