বৃদ্ধ বয়সে নতুন জীবন: ব্যবসার জগতে ৬০ এর পর সাফল্যের গোপন রহস্য!

বাংলাদেশের বয়স্ক মানুষেরা, বিশেষ করে ষাটের কোঠা পেরিয়ে যাওয়া মানুষেরা, নতুন করে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছেন। কর্মজীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আর উদ্যমকে সঙ্গী করে তারা যেন নতুন দিগন্তের সূচনা করছেন।

যুক্তরাজ্যে এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, যারা জীবনের এই পর্যায়ে এসে নতুন করে ব্যবসা শুরু করছেন। কেউ তাদের পুরোনো পেশা থেকে অবসর নিয়েছেন, আবার কেউবা আর্থিক সচ্ছলতা অথবা পছন্দের কাজ করার জন্য এই পথে এসেছেন।

তাদের এই উদ্যোক্তা হওয়ার গল্পগুলো বর্তমান প্রজন্মের জন্য এক দারুণ অনুপ্রেরণা।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে ষাটোর্ধ্ব স্ব-কর্মসংস্থানীর সংখ্যা প্রায় ৯ লক্ষ ৯১ হাজারে পৌঁছেছে। এর আগে এত বেশি বয়স্ক মানুষ স্ব-উদ্যোগে কোনো কাজ করেননি।

শুধু তাই নয়, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের নতুন ব্যবসার ৩৫ শতাংশই শুরু করছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা। এর মূল কারণ হিসেবে জানা যায়, অনেক বয়স্ক মানুষ কর্মজীবনে ভালো সুযোগ পান না।

কেউ কেউ হয়তো নিয়মিত কাজের জন্য শারীরিক দুর্বলতার শিকার হন, আবার বয়স বাড়ার কারণে অনেকে কাজ খুঁজে পেতেও সমস্যায় পড়েন।

ফাইভ এলাকার বাসিন্দা ৬৩ বছর বয়সী কারি জনস্টন পেশায় ছিলেন নার্স। ৪৫ বছর নার্সিং করার পর ৬৩ বছর বয়সে তিনি ডিক্লাটারিং বা জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার একটি ব্যবসা শুরু করেন।

তিনি বলেন, কাজটি তিনি খুব উপভোগ করেন। ঘণ্টায় প্রায় ৩,৫০০ টাকার বিনিময়ে তিনি কাজ করেন, যেখানে প্রতিটি কাজের জন্য সাধারণত কমপক্ষে চার ঘণ্টা সময় লাগে।

এই কাজের মাধ্যমে তিনি যেমন অর্থ উপার্জন করেন, তেমনি জীবনটাকে উপভোগও করেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, নাতি-নাতনিদের দেখাশোনা করা অথবা ছুটি কাটানোর মতো বিষয়গুলোও তার কাজের সঙ্গে মানিয়ে যায়।

শুধু কারি জনস্টনই নন, এমন আরও অনেকে আছেন যারা এই বয়সে নতুন করে উদ্যোক্তা হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৩ বছর বয়সী জিওফ কার্স একজন।

ভূ-তত্ত্ববিদ্যায় প্রশিক্ষণ নেওয়া জিওফ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কর্পোরেট সেলসে কাজ করেছেন। তবে জীববৈচিত্র্যের প্রতি তার ছিল বিশেষ আগ্রহ।

জীববৈচিত্র্যের দ্রুত অবক্ষয় দেখে তিনি উদ্বিগ্ন হন এবং এর পরিমাপের জন্য একটি নতুন পদ্ধতি তৈরির কথা ভাবেন। অবশেষে, তিনি শব্দ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) ব্যবহার করে জীববৈচিত্র্য পরিমাপ করার একটি প্রযুক্তি কোম্পানি তৈরি করেন।

জিওফ বলেন, এই কাজটি তার জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা।

অন্যদিকে, ৬২ বছর বয়সী সিবিল হাইড নামের একজন নারী শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর নিজের পছন্দের কাজ শুরু করেন। তিনি কার্টেন তৈরির ব্যবসা শুরু করেন।

তার ভাষায়, “আমি মনে করি আমি এখনো অনেক তরুণ, তাই বসে থাকার কোনো মানে নেই।”

তবে সবার পথটা মসৃণ ছিল না। এই যেমন, ৬৪ বছর বয়সী ক্যাথ। তিনি দীর্ঘদিন আইটি সেক্টরে কাজ করার পর নিজের একটি বেকারি শুরু করেন। তবে বয়স্ক হওয়ায় ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন এবং সহায়তা পেতে তাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

অন্যদিকে, ৭০ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু হল দীর্ঘদিন নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেছেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি বিরল ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে একটি কোম্পানি তৈরি করেন।

তিনি বলেন, “আমি এখনো মনে করি আমার মধ্যে কিছু করার মতো শক্তি আছে।”

এসব উদ্যোক্তাদের গল্পগুলো আমাদের দেখায়, বয়স কোনো বাধা নয়। ইচ্ছাশক্তি, অভিজ্ঞতা এবং নতুন কিছু করার আগ্রহ থাকলে জীবনের যে কোনো সময়েই নতুন পথে চলা সম্ভব।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *