আন্তর্জাতিক বাণিজ্য একটি জটিল বিষয়, যা বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। শুল্ক বা ট্যাক্স এই বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা একটি দেশের সরকার আমদানি ও রপ্তানির উপর আরোপ করে।
এই শুল্ক বিভিন্ন দেশের মধ্যে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে এবং ব্যবসায়ীদের লাভ-ক্ষতির হিসাবের উপর প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের থেকে আসা পণ্যের উপর বেশ কয়েকটি উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যার ফলস্বরূপ অনেক মার্কিন ব্যবসায়ী এই শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে বাধ্য হয়েছেন।
এই প্রতিবেদনে আমরা সেই কৌশলগুলো নিয়েই আলোচনা করব এবং দেখব এর সম্ভাব্য প্রভাব কী হতে পারে।
**শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার অভিনব কৌশল**
যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য ব্যবসায়ীরা দুটি প্রধান উপায় বেছে নিচ্ছেন। প্রথমটি হলো ‘শুল্ক প্রকৌশল’ (Tariff Engineering)।
এর মাধ্যমে পণ্যের উপাদান বা নকশায় সামান্য পরিবর্তন এনে শুল্কের হার কমানো যায়। উদাহরণস্বরূপ, কনভার্স (Converse) কোম্পানির বিখ্যাত ‘অল স্টার’ স্নিকার্সের (All Stars sneakers) কথা ধরা যাক।
সাধারণত এই জুতার নিচে রাবার ব্যবহার করা হলেও, কিছু ক্ষেত্রে সেখানে ফেল্ট ব্যবহার করা হয়। এর কারণ হলো, ফেল্টের তৈরি জুতা শুল্ক কোডের অধীনে ‘হাউস স্লিপার’-এর (house slippers) মতো গণ্য হতে পারে, যার ফলে কম শুল্ক দিতে হয়।
এছাড়াও, কলম্বিয়া স্পোর্টসওয়্যার (Columbia Sportswear) নামক একটি কোম্পানি তাদের শার্টের ডিজাইন পরিবর্তন করে শুল্কের হার কমিয়েছে।
তারা শার্টের নিচে ছোট ছোট জিপারযুক্ত পকেট যোগ করে, যা তাদের কম শুল্কের আওতায় ফেলতে সাহায্য করেছে।
দ্বিতীয় কৌশলটি হলো ‘বন্ডেড গুদামঘর’ (Bonded Warehouse) ব্যবহার করা।
এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা শুল্ক পরিশোধ না করেই পণ্য আমদানি করতে পারেন। এই গুদামগুলো বিশেষ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে থাকে এবং এখানে পণ্য পাঁচ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
ব্যবসায়ীরা পণ্য বের করার সময় বর্তমান শুল্ক হার অনুযায়ী ট্যাক্স পরিশোধ করেন। যদি তারা মনে করেন ভবিষ্যতে শুল্কের হার কমবে, তবে তাদের জন্য এটি লাভজনক হতে পারে।
লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের কাছে অবস্থিত হাওয়ার্ড হার্টরি (Howard Hartry) নামক একটি কাস্টম ব্রোকারের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর তাদের বন্ডেড গুদামঘরের ব্যবসা অনেক বেড়েছে।
তাদের গুদামে বিভিন্ন ধরনের পণ্য, যেমন – লিথিয়াম ব্যাটারি, ধাতব রড এবং টেলিভিশন ও ট্রেডমিল-এর মতো ইলেকট্রনিক সামগ্রী রাখা হয়, যেগুলোর মূল্য ৩৭ হাজার ডলার থেকে শুরু করে পাঁচ লক্ষ ডলার পর্যন্ত হতে পারে (প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা থেকে ৪ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা)।
**বাংলাদেশের জন্য এর প্রভাব**
যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কনীতি এবং ব্যবসায়ীদের কৌশলগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যদিও এই মুহূর্তে এর সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশে খুব বেশি নয়, তবে বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতি যেকোনো দেশের অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষ করে, পোশাকশিল্পের মতো রপ্তানিনির্ভর শিল্পগুলোতে শুল্কের পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভবিষ্যতে, বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি এবং শুল্কের হার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদেরও এই ধরনের কৌশল সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে পারে।
তথ্য সূত্র: CNN