মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস-এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন, তদন্তের পরেও কাটেনি বিতর্ক।
গত বছর, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর পেনসিলভানিয়ার বাটলারে একটি সমাবেশে হামলার চেষ্টা হয়। এই ঘটনার এক বছর পরেও, সিক্রেট সার্ভিসের কর্মীরা তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে অসন্তুষ্ট। কর্মকর্তাদের একাংশ মনে করেন, ঘটনার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, হামলার দিন সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ত্রুটি ছিল। স্থানীয় পুলিশ হামলাকারীকে শনাক্ত করে কাছাকাছি একটি ভবনের ছাদে আটক করার চেষ্টা করে। কিন্তু এর আগেই হামলাকারী ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এই ঘটনায় একজন নিহত এবং দুইজন গুরুতর আহত হন।
ঘটনার পর সিক্রেট সার্ভিসের অভ্যন্তরীণ তদন্তে বেশ কিছু নিরাপত্তা দুর্বলতা ধরা পড়ে। এর মধ্যে ছিল স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব। এমনকি, হামলাকারীর উপস্থিতি সম্পর্কে ট্রাম্পের নিরাপত্তা দলের সদস্যরা সময় মতো জানতে পারেননি। এছাড়াও, সমাবেশের চারপাশে দীর্ঘ-পাল্লার শুটারদের আটকাতে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়নি।
তদন্তে উঠে আসে, হামলার আগে ইরানের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে হত্যার একটি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তবে সিক্রেট সার্ভিসের শীর্ষস্থানীয় অনেক কর্মকর্তাই এই বিষয়ে অবগত ছিলেন না।
এই ঘটনার জেরে অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়নি। বরং, ট্রাম্পের নিরাপত্তা দলের প্রধান শন কারানকে পদোন্নতি দিয়ে সিক্রেট সার্ভিসের পরিচালক করা হয়েছে। এই পদক্ষেপে কর্মীদের মধ্যে হতাশা আরও বেড়েছে। জানা যায়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত মাত্র কয়েকজন কর্মীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।
এদিকে, বাটলারে নিরাপত্তা ব্যর্থতার পর সিক্রেট সার্ভিসে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের কারণে গুরুত্বপূর্ণ পদের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এতে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারাও সিক্রেট সার্ভিসের এই দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সিনেটর র্যান্ড পল-এর নেতৃত্বে একটি কমিটি বাটলারে নিরাপত্তা ব্যর্থতার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল।
সিক্রেট সার্ভিসের বর্তমান পরিচালক শন কারান অবশ্য দাবি করেছেন, বাটলারে ঘটা ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম তৈরি করা হয়েছে।
তবে, অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, শুধুমাত্র নিয়ম পরিবর্তন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করা সম্ভব নয়। তাদের মতে, মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় ও যোগাযোগের অভাব ছিল, যা এখনো কাটেনি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন