বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে টেসলার প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে চীনের কোম্পানি বিওয়াইডি’র উত্থান এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বার্ষিক আয়ের দিক থেকে বিওয়াইডি টেসলাকে ছাড়িয়ে গেছে, যা বিশ্ব বাজারে তাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।
বিগত বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বেড়েছে, এবং এই বাজারে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে বিওয়াইডি। তারা শুধু চীন নয়, অন্যান্য দেশেও তাদের বাজার প্রসারিত করছে।
অন্যদিকে, টেসলা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। শেয়ারের দাম কমা, কিছু বাজারে বিক্রি কমে যাওয়া, এবং সেই সাথে এলন মাস্কের বিতর্কিত রাজনৈতিক মন্তব্য—এসব কারণে টেসলার জনপ্রিয়তা কিছুটা হলেও কমেছে।
জানা গেছে, বিওয়াইডি ২০২৩ সালে ১০ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বেশি রাজস্ব আয় করেছে। যেখানে টেসলার আয় ছিল প্রায় ৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
এর কারণ হিসেবে বলা যায়, বিওয়াইডি তুলনামূলকভাবে কম দামে তাদের গাড়ি সরবরাহ করতে পারছে। উদাহরণস্বরূপ, চীনে একটি বেসিক মডেলের বিওয়াইডি’র দাম যেখানে ১০ হাজার ডলারের কম, সেখানে টেসলার মডেল-৩ কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হয় প্রায় ৩২ হাজার ডলার।
বিওয়াইডি সম্প্রতি তাদের নতুন একটি চার্জিং প্রযুক্তি উন্মোচন করেছে, যা গাড়িকে মাত্র পাঁচ মিনিটে ২৫০ মাইল পর্যন্ত চালানোর শক্তি যোগাতে সক্ষম। এছাড়াও, তারা একটি নতুন ইলেকট্রিক সেডান—কিন এল—বাজারে এনেছে, যার দাম প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ ডলার।
এই গাড়িটির বৈশিষ্ট্য টেসলার মডেল-৩ এর কাছাকাছি হলেও দাম অনেক কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলন মাস্ক সম্ভবত বিওয়াইডি’র সম্ভাবনাকে শুরুতে সেভাবে মূল্যায়ন করেননি। ২০১১ সালে তিনি এই চীনা কোম্পানিকে তেমন গুরুত্ব দেননি।
কিন্তু বর্তমানে বিওয়াইডি’র এই অভাবনীয় উন্নতি প্রমাণ করে দিয়েছে যে, বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে তারা এখন একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ।
ইউরোপের বাজারেও টেসলার বিক্রি কমেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে টেসলার বিক্রি ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে, যেখানে চীনা ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রি বেড়েছে ৮২ শতাংশ।
এর কারণ হিসেবে টেসলার পুরনো মডেলের উৎপাদন পুনর্বিন্যাস এবং এলন মাস্কের বিতর্কিত রাজনৈতিক অবস্থানকে দায়ী করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতে টেসলা তাদের বাজার পুনরুদ্ধারের জন্য চেষ্টা করছে। তারা একটি ছোট এবং সস্তা মডেলের ওয়াই তৈরি করার পরিকল্পনা করছে, তবে এর উৎপাদন সম্ভবত ২০২৬ সাল পর্যন্ত শুরু হবে না।
বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বাড়ছে। সরকারের নীতি এবং বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে ভবিষ্যতে এখানেও এই গাড়ির বাজার আরও প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, বিওয়াইডি’র মতো কোম্পানিগুলোর উত্থান বাংলাদেশের গাড়ির বাজারেও পরিবর্তন আনতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন