একটি রুটিন সি-সেকশনের (Cesarean Section) চার ঘণ্টা পরেই মৃত্যু, মা-হারা দুই যমজ সন্তান, ক্ষতিপূরণ ২২ মিলিয়ন ডলার – এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। ঘটনাটি ২০১৭ সালের।
যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী মাউরা গ্যালাঘার, তার যমজ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়েছিলেন। সবকিছু ঠিকঠাক চললেও, অস্ত্রোপচারের কয়েক ঘণ্টা পরেই ঘটে বিপত্তি।
মাউরার পরিবার সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে ভর্তির সময় থেকেই তার উচ্চ রক্তচাপ এবং প্লেটলেট কমে যাওয়ার মতো সমস্যা ছিল। চিকিৎসকদের অবহেলায় প্রিক্ল্যাম্পসিয়া (Preeclampsia)-র বিষয়টি সেভাবে নজরে আসেনি।
প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হলো গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের একটি গুরুতর জটিলতা, যা মা ও শিশুর জন্য মারাত্মক হতে পারে। এর ফলে খিঁচুনি, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, এমনকি অঙ্গহানি পর্যন্ত হতে পারে।
অস্ত্রোপচারের সময় মাউরার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে। বমি ভাব কমাতে তাকে দেওয়া হয় ওষুধ, যা তার উচ্চ রক্তচাপ আরও বাড়িয়ে দেয়।
এর কিছুক্ষণ পরেই মাউরা কাঁপতে শুরু করেন, শ্বাসকষ্ট হতে থাকে এবং তীব্র মাথাব্যথা অনুভব করেন। চিকিৎসকেরা বিষয়টিকে প্রথমে উদ্বেগের কারণ হিসেবে আমলে নেননি।
এরপর, অস্ত্রোপচারের পর মাউরার শরীরে দ্রুত একাধিক ওষুধের মিশ্রণ প্রয়োগ করা হয়, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
অস্ত্রোপচারের চার ঘণ্টা ১৫ মিনিটের মাথায় মাউরার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় এবং তিনি কোমা-তে চলে যান। এর পরদিন, পরিবারের সদস্যরা লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন।
এই ঘটনার আট বছর পর, মাউরার পরিবার ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর, আদালত চিকিৎসকদের গাফিলতির প্রমাণ পান।
আদালত এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য হাসপাতাল এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের দায়ী করে মাউরার পরিবারকে প্রায় ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২৩০ কোটি টাকার মতো (পরিবর্তনশীল)।
মাউরার বোন, এরিন ও’রোর্কে বলেন, “এই ঘটনা বুঝিয়ে দেয়, অনেক সময় চিকিৎসকদের সামান্য গাফিলতিও কতটা ভয়ংকর হতে পারে। মাউরাকে হারানোর কষ্ট কোনো দিন ভোলার নয়।”
মাউরা-র স্বামী ম্যাক্স ডিডোডো জানান, “আমরা আমাদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দিতে চাই। তারা এখন ভালো আছে। তবে মাউরা-কে হারানোর শূন্যতা কখনোই পূরণ হবার নয়।”
পরিবারটি এখন চাইছে, তাদের এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে যেন অন্য কোনো মায়ের জীবনে এমন মর্মান্তিক ঘটনা না ঘটে। তারা চান, সবাই মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হোক।
উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও, এখনো অনেক মায়ের জীবন প্রসবকালীন জটিলতার কারণে ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তাই, প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের জন্য সঠিক সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্যসূত্র: পিপলস