“ক্যাফে ফ্লেশ”: ১৯৮০-এর দশকের এক ভিন্ন ধারার সিনেমা, যা যৌনতা ও সমাজের প্রতিচ্ছবি।
সিনেমা একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা সমাজের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলে। ১৯৮২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত স্টিফেন সায়েদিয়ান (রিন্স ড্রিম) পরিচালিত “ক্যাফে ফ্লেশ” তেমনই একটি সিনেমা, যা ১৯৮০-এর দশকের আমেরিকার সংস্কৃতি এবং উদ্বেগকে পর্দায় তুলে ধরেছিল। সিনেমাটি মুক্তির পর সমালোচিত হলেও, পরবর্তীতে এটি একটি কাল্ট ক্লাসিকের মর্যাদা লাভ করে।
সিনেমাটির প্রেক্ষাপট একটি ভবিষ্যৎ জগৎ, যেখানে পারমাণবিক বিপর্যয়ের কারণে বেশিরভাগ মানুষ যৌন মিলনে অক্ষম। এই পরিস্থিতিতে, সমাজের প্রভাবশালী শ্রেণির মনোরঞ্জনের জন্য “সেক্স পজিটিভ” নামে পরিচিত অল্প কিছু মানুষকে যৌনকর্ম করতে বাধ্য করা হয়। সিনেমার গল্প, এই কঠিন বাস্তবতার মধ্যে প্রেম, কামনা, এবং সমাজের গভীর ক্ষতগুলো নিয়ে নির্মিত।
“ক্যাফে ফ্লেশ”-এর পরিচালক স্টিফেন সায়েদিয়ান সিনেমাটির নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেন, “আমি মনে করি, পর্নোগ্রাফি (যৌন দৃশ্যের সিনেমা) হলো সবচেয়ে রক্ষণশীল ব্যবসা।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি তৎকালীন সমাজের যৌনতা বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন। সিনেমাটি তৈরি করার সময়, সায়েদিয়ান প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে, যৌন দৃশ্যের চিত্রায়ণে নতুনত্ব এনেছিলেন। তিনি দ্রুত দৃশ্যের পরিবর্তন এবং অভিনেতাদের আবেগপূর্ণ অভিব্যক্তিগুলো এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।
শুরুর দিকে, “ক্যাফে ফ্লেশ” পর্ন সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে তেমন পরিচিতি পায়নি। কিন্তু, পরবর্তীতে এটি “মিডনাইট মুভি সার্কিট”-এ প্রদর্শিত হতে শুরু করে, যেখানে “দ্য রকি হরর পিকচার শো”, “পিঙ্ক ফ্লেমিঙ্গোস” এবং “ইরেজারহেড”-এর মতো বিতর্কিত সিনেমাগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। সময়ের সাথে সাথে, “ক্যাফে ফ্লেশ” একটি বিশাল দর্শকগোষ্ঠীর কাছে পরিচিতি লাভ করে।
সিনেমাটির নির্মাণশৈলীও ছিল ভিন্ন ধরনের। ১৯৮০-এর দশকের বিজ্ঞাপন জগতের চাকচিক্য এবং ১৯৫০-এর দশকের আমেরিকান সংস্কৃতির মিশ্রণে, এটি একটি আকর্ষণীয় দৃশ্য তৈরি করে। সিনেমার পরিচালক ফ্রেড অ্যাস্টায়ারের “গাইজ অ্যান্ড ডলস” এবং “ক্যাবারে”-এর মতো ক্লাসিক সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
“ক্যাফে ফ্লেশ”-এর গল্প, যৌনতা, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানুষের ভেতরের জটিলতাগুলো নিয়ে গভীর আলোচনা করে। সিনেমাটি সেই সময়ের সমাজের অস্থিরতা, পারমাণবিক ভীতি, এবং এইডস-এর মতো বিষয়গুলোকেও তুলে ধরেছে। সিনেমাটি, সেই সময়ের সংস্কৃতি এবং দর্শকদের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
“ক্যাফে ফ্লেশ” একটি সাহসী চলচ্চিত্র, যা প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়ে সমাজের লুকানো দিকগুলো উন্মোচন করে। সিনেমাটি, দর্শকদের মধ্যে আজও আলোচনার বিষয়, এবং এটি চলচ্চিত্র ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান