ট্রাম্প প্রশাসনের সমুদ্র সুরক্ষা কমানোর বিপরীতে, ক্যালিফোর্নিয়ার পদক্ষেপ: পরিবেশ রক্ষার দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি।
যুক্তরাষ্ট্রে, একদিকে যখন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশান্ত মহাসাগরের একটি বিশাল অংশে বাণিজ্যিক মাছ ধরার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছেন, তখন ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য তার সমুদ্র রক্ষার এলাকা আরও বিস্তৃত করার কথা ভাবছে। পরিবেশ সুরক্ষার এই দুটি ভিন্ন চিত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে – কীভাবে সমুদ্রকে রক্ষা করা যায় এবং একইসঙ্গে সেখানকার মানুষের জীবিকার সুযোগ বজায় রাখা যায়।
প্রশান্ত মহাসাগরের দূরবর্তী দ্বীপপুঞ্জের সংরক্ষিত অঞ্চলে ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় ১৩ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকার জলসীমায় বাণিজ্যিক মাছ ধরার অনুমতি দিয়েছে। এর ফলে, আগে সুরক্ষিত থাকা এলাকাগুলোতে মাছ ধরা আবার শুরু হবে। পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, এই পদক্ষেপ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে, যেখানে প্রবাল প্রাচীর, কচ্ছপ, তিমি এবং আরও হাজারো প্রজাতির প্রাণী বাস করে।
অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের কর্মকর্তারা তাদের সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকাগুলোর (Marine Protected Areas – MPA) পর্যালোচনা করছেন। এই পর্যালোচনায় এলাকাগুলো আরও বিস্তৃত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রায় ১৬ শতাংশ জলসীমা এমপিএর আওতাভুক্ত। প্রস্তাবিত সম্প্রসারণের ফলে আরও ২ শতাংশ এলাকা যুক্ত হবে। ক্যালিফোর্নিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, এটি সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সহায়ক হবে।
ক্যালিফোর্নিয়ার এমপিএ নেটওয়ার্কটি ২০০৩ সালে তৈরি করা হয়েছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। এই নেটওয়ার্কে ১২৪টি আলাদা এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু এলাকা ‘নো-টেক জোন’, যেখানে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আবার কিছু এলাকায় সীমিত আকারে মাছ ধরার অনুমতি রয়েছে।
তবে, এই সম্প্রসারণ প্রস্তাব নিয়ে স্থানীয় জেলেদের মধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অনেক জেলে মনে করেন, কিছু কিছু এলাকার বিধিনিষেধ তাদের জীবিকার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তাদের দাবি, যেসব অঞ্চলে পরিযায়ী মাছেরা অল্প সময়ের জন্য আসে, সেখানে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়াটা খুব একটা যুক্তিযুক্ত নয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবেশ বিভাগের একজন কর্মকর্তা ক্রেইগ শুম্যান জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হলো সুরক্ষা এবং মাছ ধরার সুযোগের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ার মতো রাজ্যে, যেখানে মাছ ধরা নিয়ন্ত্রণের জন্য শক্তিশালী আইন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমপিএগুলো সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষার চেষ্টা, তেমনি সেখানকার জেলে ও স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার ওপর এর প্রভাব বিবেচনা করা হচ্ছে।
এই বিতর্কের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্ভবত আগামী বছরের শুরুতেই আসবে। পরিবেশ রক্ষার এই দ্বন্দ্বে, যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সমুদ্র সম্পদ রক্ষা করে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।