শিরোনাম: ক্যালিফোর্নিয়ার সমুদ্র সিংহদের বিষাক্ত শৈবাল: উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের জন্য এক সতর্কবার্তা
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ক্যালিফোর্নিয়ার সমুদ্র সিংহদের মধ্যে এক রহস্যজনক আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু প্রাণী মানুষের উপর আক্রমণ করেছে, যা আগে ছিল কল্পনাতীত।
এর কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, *Pseudo-nitzschia* নামক এক ধরনের শৈবাল থেকে নিঃসৃত হওয়া বিষাক্ত ডোমোইক অ্যাসিডের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অ্যাসিডের প্রভাবে সমুদ্র সিংহদের স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং তারা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানিতে এই ক্ষতিকর শৈবালের বিস্তার বাড়ছে, যা উপকূলীয় অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের জন্য এক গুরুতর উদ্বেগের কারণ।
লস অ্যাঞ্জেলেসের উত্তরে সমুদ্রের ধারে সার্ফিং করার সময় ৪০ বছর বয়সী আলোকচিত্রী আরজে লামেন্ডোলা এক অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার শিকার হন। একটি সমুদ্র সিংহ তার দিকে তেড়ে আসে এবং তার পশ্চাৎদেশে কামড় দেয়।
লামেন্ডোলা বলেন, “আমি সেই মুহূর্তে কতটা ভীত হয়েছিলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। প্রাণীটির চোখে-মুখে ছিল এক হিংস্র অভিব্যক্তি, যা আগে কখনো দেখিনি।” সৌভাগ্যবশত, তিনি গুরুতর আহত হননি।
তবে এই ঘটনার পর তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং জানতে পারেন যে, ক্ষতিকর শৈবালের কারণে সৃষ্ট এই পরিস্থিতি শুধু সমুদ্র সিংহ নয়, বরং সাধারণ ডলফিনসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর জীবনকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, *Pseudo-nitzschia* নামক শৈবাল থেকে নিঃসৃত ডোমোইক অ্যাসিড এক প্রকার নিউরোটক্সিন বা স্নায়ুবিষ। এটি সামুদ্রিক প্রাণীর মস্তিষ্কে মারাত্মক ক্ষতি করে, যার ফলে তাদের আচরণে পরিবর্তন আসে, খিঁচুনি হতে পারে এবং স্মৃতিশক্তিও দুর্বল হয়ে যায়।
এই বিষাক্ত উপাদান খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। শৈবাল খেয়ে ছোট মাছ এবং শেলফিশেরা এই বিষ শরীরে জমা করে। এরপর যখন সমুদ্র সিংহ বা ডলফিনেরা এই দূষিত মাছগুলো খায়, তখন তাদের শরীরেও বিষক্রিয়া হয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূল জুড়ে বর্তমানে প্রায় ৩৭0 মাইল এলাকা জুড়ে এই ক্ষতিকর শৈবালের বিস্তার ঘটেছে, যা সান দিয়েগো কাউন্টি থেকে শুরু করে সান্তা বারবারা কাউন্টি পর্যন্ত বিস্তৃত।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রের পানিতে পুষ্টি উপাদানের তারতম্যের কারণে এই ধরনের শৈবালের দ্রুত বৃদ্ধি হচ্ছে। বিশেষ করে, বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের গভীর থেকে পুষ্টিসমৃদ্ধ ঠান্ডা জল উপরে উঠে আসে, যা শৈবালের বিস্তারে সহায়ক হয়।
এই পরিস্থিতিতে, ক্ষতিগ্রস্ত সমুদ্র সিংহ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীদের উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন পুনর্বাসন কেন্দ্র কাজ করছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, একবার যদি কোনো প্রাণী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তার পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
তাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায় এবং তারা স্বাভাবিকভাবে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না।
বিশেষজ্ঞরা জনসাধারণকে অসুস্থ বা আহত সামুদ্রিক প্রাণী থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
তাদের মতে, কোনো অসুস্থ প্রাণীর কাছাকাছি যাওয়া বা তাদের জোর করে পানিতে ফেরানোর চেষ্টা করা উচিত নয়।
এই ঘটনা ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলের পরিবেশের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্র দূষণের মতো বৃহত্তর পরিবেশগত সমস্যাগুলোর একটি উদাহরণ, যা আমাদের সবার জন্য উদ্বেগের বিষয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে দূষণ রোধ করা এবং পরিবেশ সুরক্ষায় আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক