ক্যাম্প মিস্টিক ট্র্যাজেডি: ঘুমের মাঝেই ৭ বছরের শিশুদের উপর বন্যার বিভীষিকা!

টেক্সাসের একটি বালিকা আবাসিক শিবিরে ভয়াবহ বন্যা : ২৬ জনের বেশি নিহত, শোকস্তব্ধ পরিবার।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি বালিকা আবাসিক শিবিরে ভয়াবহ বন্যায় কমপক্ষে ২৬ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত ৪ঠা জুলাই, স্বাধীনতা দিবসের ভোরে অপ্রত্যাশিত এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ক্যাম্পটির আশেপাশে।

জানা গেছে, ঘটনার সময় ক্যাম্পে প্রায় ৭৫০ জন ছাত্রী ছিল, যাদের বয়স সাত বছর থেকে শুরু করে কিশোরী পর্যন্ত ছিল।

ক্যাম্পটি গুয়াদালুপ নদীর তীরে অবস্থিত ছিল, যা বন্যাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে জরুরি আবহাওয়ার সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যেই বিপর্যয় নেমে আসে।

ক্যাম্পের কয়েকজন ছাত্রী জানায়, তারা প্রথমে বজ্রপাতের শব্দে জেগে ওঠে। তাদের শিক্ষিকারা তাদের শান্ত থাকতে এবং ঘুমোতে বলেন।

কিন্তু কিছু ছাত্রীর মধ্যে একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করছিল। এক ছাত্রী জানায়, তার মনে হচ্ছিলো যেন কিছু একটা ভুল হতে যাচ্ছে।

বন্যার পানি যখন দ্রুত বাড়তে শুরু করে, তখন ক্যাম্পের কর্মীরা দ্রুত মেয়েদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিছু ছাত্রীকে নিকটবর্তী একটি বিনোদন কেন্দ্রে এবং উঁচু স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের শরীরে নাম লেখার মতো ঘটনাও ঘটে।

ক্যাম্পের কর্মীরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, তাদের বুক সমান জল ভেঙে ছাত্রীদের উদ্ধার করতে হয়েছে। কিছু ছাত্রী তাদের জিনিসপত্র বাঁচাতে চেষ্টা করে, কেউ কেউ তাদের প্রিয় খেলনা আঁকড়ে ধরে ছিল।

ক্যাম্পের মালিক ডিক ইস্টল্যান্ড এবং তার ছেলে এডওয়ার্ড ইস্টল্যান্ড দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে ছাত্রীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেন। উদ্ধারকর্মীরা হেলিকপ্টার ও নৌকার মাধ্যমে মেয়েদের উদ্ধার করে।

বন্যার পরে, ছাত্রীদের ইনগ্রাম এলিমেন্টারি স্কুলে (Ingram Elementary) নেওয়া হয়, যেখানে তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়। তবে, এই মিলনের মাঝেও ছিল গভীর শোকের ছায়া।

কারণ, বন্যায় নিহতদের মধ্যে ক্যাম্পের শিক্ষক এবং ছাত্রীও ছিল।

ক্যাম্পে শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করা হয়। স্থানীয়রা তাদের প্রিয়জনদের হারানোর বেদনায় এখনো কাঁদছেন।

ক্যাম্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি তাদের জন্য একটি কঠিন সময়।

এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করে স্থানীয় স্ট্যাসি মার্চেন্ট জানান, তার মেয়ে রিস নিরাপদে ফিরে আসলেও অনেকের কাছে তাদের মেয়ের পাঠানো প্রথম চিঠিটি এখনো এসে পৌঁছায়নি, যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।

ক্যাম্পের কর্মীরা জানান, ক্যাম্পটি মেয়েদের জন্য একটি দ্বিতীয় আবাসস্থল ছিল, যেখানে তারা একসঙ্গে খেলাধুলা করত এবং জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু শিখত। এই ঘটনার পর, ক্যাম্পের সদস্যরা শোকাহত এবং তারা এই ক্ষতির গভীরতা উপলব্ধি করতে পারছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *