কানাডায় আসন্ন নির্বাচন: মার্ক কারনির নেতৃত্বে লড়ছে লিবারেল পার্টি, আলোচনায় ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি।
কানাডার রাজনীতি এখন বেশ সরগরম। আগামী ২৮শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশটির ফেডারেল নির্বাচন। নির্বাচনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সম্পর্ক এবং বাণিজ্য বিষয়ক বিভিন্ন বিতর্ক। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনির নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি চাইছে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান আরও দৃঢ় করতে।
নির্বাচনের প্রচারণার শুরুতে প্রধান ইস্যুগুলো হলো- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার বাণিজ্য সম্পর্ক এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্ক আরোপ ও বিভিন্ন হুমকি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বিষয়গুলোই আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের প্রধান আলোচনার বিষয় হবে।
কানাডার নির্বাচনী ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের থেকে কিছুটা ভিন্ন। এখানে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। এই পদ্ধতিতে, যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনি জয়ী হন, যদিও তিনি মোট ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাও পেতে পারেন। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অফ কমন্সে তাদের আসন গ্রহণ করেন।
কানাডার পার্লামেন্টারি সিস্টেমে, যে দল হাউজ অফ কমন্সে সবচেয়ে বেশি আসন লাভ করে, সাধারণত তারাই সরকার গঠন করে। যদি কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে, তবে তারা অন্য দলের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠনের চেষ্টা করে। সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী হন, তবে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
বর্তমানে কানাডায় চারটি প্রধান রাজনৈতিক দল সক্রিয় রয়েছে। লিবারেল পার্টি ২০১৫ সাল থেকে সরকারে আছে এবং তাদের পার্লামেন্টে ১৫২ জন সদস্য রয়েছেন। এর আগে জাস্টিন ট্রুডো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তবে তিনি ১৪ই মার্চ পদত্যাগ করেন এবং মার্ক কারনি নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রধান বিরোধী দল হিসেবে রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি, যাদের পার্লামেন্টে ১২০ জন সদস্য রয়েছেন।
দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন পিয়েরে পয়েলিয়েভরে। এছাড়াও, নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) এবং ব্লকের কুইবেকোয়া দলেরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংসদ সদস্য রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের মূল বিষয় হতে পারে- ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে এবং কোন দল এই সম্পর্ক ভালো ভাবে পরিচালনা করতে পারবে। বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে কনজারভেটিভ পার্টি, দ্রব্যমূল্য এবং আবাসন সংকটের মতো বিষয়গুলো নির্বাচনে তুলে ধরতে চাইছে।
তবে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম অঙ্গরাজ্য’ বানানোর ঘোষণার কারণে আলোচনার মোড় ঘুরে গেছে।
বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, লিবারেল এবং কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। কোনো কোনো জরিপে লিবারেল পার্টি সামান্য এগিয়ে আছে, আবার কোনোটিতে কনজারভেটিভ পার্টিকে এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের ফলাফলের ওপর কানাডার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে, যা দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতিকে প্রভাবিত করবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা