ভোটের আগে: কানাডায় ভয়ঙ্কর রূপে বাড়ছে ভুয়া রাজনৈতিক কনটেন্ট!

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া রাজনৈতিক কনটেন্টের উদ্বেগজনক বৃদ্ধি, কানাডার নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। দেশটির আসন্ন ফেডারেল নির্বাচনের প্রাক্কালে, অনলাইনে ভুল তথ্যের বিস্তার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটির এক-চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভুয়া রাজনৈতিক তথ্যের শিকার হয়েছেন।

গবেষণা বলছে, এসব কন্টেন্ট আগের চেয়ে অনেক বেশি সুসংগঠিত এবং রাজনৈতিকভাবে মেরুকরণ সৃষ্টিকারী। নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে অনলাইনে মিথ্যা তথ্যের এই ‘বিস্ময়কর’ বৃদ্ধি প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য নতুন সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

কানাডার মিডিয়া ইকোসিস্টেম অবজারভেটরি (MEO) নামের একটি গবেষণা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অনেক ভুয়া বিজ্ঞাপন এখন আসল সংবাদ মাধ্যমের মতো দেখাচ্ছে, যা সাধারণত ক্রিপ্টোকারেন্সি-সংক্রান্ত প্রতারণামূলক স্কিম প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

আসন্ন ২৮শে এপ্রিলের নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। মেটা (Meta)-র মালিকানাধীন ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে কানাডার খবর শেয়ার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের কারণ হলো অনলাইন নিউজ অ্যাক্ট (Online News Act) নিয়ে মেটা ও অটোয়ার মধ্যে মতবিরোধ। আইনটি সংবাদমাধ্যমগুলোকে তাদের কন্টেন্ট শেয়ার করার জন্য মেটা ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুযোগ করে দেয়।

মেটা এই আইনকে ‘অকার্যকর’ বলে অভিহিত করেছে এবং তাদের মতে, এর একমাত্র সমাধান হলো কানাডিয়ানদের জন্য খবর সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া।

তবে, মিডিয়া গবেষকদের মতে, নিষেধাজ্ঞার পরেও অর্ধেকের বেশি কানাডিয়ান এখনো ফেসবুক থেকেই রাজনৈতিক খবর পেয়ে থাকেন। এমইও-এর নির্বাহী পরিচালক অ্যাঙ্গাস ব্রিজম্যানের মতে, ফেসবুক ব্যবহারকারীরা হয়তো সরাসরি খবর পড়ছেন না, তবে বন্ধু বা পরিবারের মন্তব্য অথবা কোনো প্রার্থী বা সাংস্কৃতিক খবর সরবরাহকারীর পোস্টের মাধ্যমে তারা রাজনৈতিক বিষয়ে অবগত হচ্ছেন।

কিন্তু আসল উদ্বেগের বিষয় হলো, এখন তারা আগের মতো নির্ভরযোগ্য এবং তথ্যপূর্ণ খবর পাচ্ছেন না।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের ভুয়া তথ্যের বেশিরভাগই হাস্যরসাত্মক বা ব্যঙ্গাত্মক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে কিছু বিজ্ঞাপন প্রতারণামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত, যা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে।

কানাডার নির্বাচন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা (Security and Intelligence Threats to Elections – Site) নির্বাচনের সময় অনলাইনে রাজনৈতিক কার্যকলাপের ওপর নজর রাখছে। তারা মনে করে, চীন, রাশিয়া এবং ইরান এই নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের চেষ্টা করতে পারে।

সম্প্রতি, চীনা ভাষার সামাজিক মাধ্যম WeChat-এ চীনের সঙ্গে যুক্ত একটি তথ্য বিনিময় নেটওয়ার্ক শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ব্রিজম্যানের মতে, এই ঘটনাটি তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি।

গবেষকরা বর্তমানে এমন কিছু স্কিমের ওপর নজর রাখছেন যেখানে ছোট ব্যবসার অ্যাকাউন্ট এবং ব্যক্তিগত প্রোফাইলের মাধ্যমে ভুয়া রাজনৈতিক খবর প্রচার করা হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মার্ক কার্নি (Mark Carney)-র মতো ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি-সংক্রান্ত প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন তৈরি করা হচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, CBC/Radio-Canada-র লোগো ব্যবহার করে ‘মানি মাইন্ডসেট’ (Money Mindset) নামের একটি পেজ কিছু ফরাসি ভাষার বিজ্ঞাপন চালায়, যার মধ্যে মার্ক কার্নির একটি ডিপফেক ভিডিও ছিল। এই বিজ্ঞাপনগুলো প্রায় C$১,০০০ (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮৫,০০০) বিনিয়োগ করে তৈরি করা হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে প্রায় ১০,০০০ জনের কাছে তথ্য পৌঁছেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ভুয়া বিজ্ঞাপন, খবর এবং ডিপফেক ভিডিওর কারণে রাজনীতিবিদ ও সংবাদমাধ্যমগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মেটার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা ব্যবহারকারীদের প্রতারণা বা অন্য কারো পরিচয় ধারণ করে বিজ্ঞাপন চালানোর অনুমতি দেন না এবং এ ধরনের কন্টেন্ট রিপোর্ট করার জন্য ব্যবহারকারীদের উৎসাহিত করেন।

গবেষকদের মতে, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত এসব বিজ্ঞাপন প্রতিরোধ করার জন্য যথেষ্ট নয়। তারা বলছেন, টিভিতে যদি কোনো ভুয়া বিজ্ঞাপন দেখানো হতো, তাহলে তা কখনোই অনুমোদিত হতো না।

কিন্তু ফেসবুকে এমন বিজ্ঞাপন চলছে যা লক্ষ লক্ষ ভিউ পাচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া তথ্যের বিস্তার এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে, নাগরিকদের নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত খবরের সত্যতা যাচাই করা জরুরি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *