বন্ধুত্ব নেই: নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কানাডার ভোটারদের ভাবনা

কানাডার আসন্ন নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের প্রভাব: ভোটারদের মধ্যে বাড়ছে জাতীয়তাবোধ।

কানাডায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটির ভোটারদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ বাড়ছে। এর মূল কারণ হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক কঠিন হয়ে পড়েছিল। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কানাডার রাজনীতিতে।

কানাডার নাগরিকদের মধ্যে এখন অনেকেই মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আগের মতো নেই। তারা তাদের দেশের স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার ওপর জোর দিচ্ছেন।

এর ফলে আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে পুরোনো দলগুলোর প্রতি আনুগত্যের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।

কানাডার অনেক ব্যবসায়ী এখন মার্কিন পণ্য বর্জন করে কানাডায় উৎপাদিত পণ্য কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন।

লিন্ডসে স্মিথ এবং ক্যাটলিন স্ট্রেইন নামের দুই নারী, যারা একটি ফুলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তারা জানান, আগে তারা যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ফুল আমদানি করতেন।

কিন্তু এখন তারা কানাডার ফুল এবং অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করছেন। তাদের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিমালার কারণে তারা এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আগের মতো আস্থা রাখতে পারছেন না।

তারা বিকল্প হিসেবে নেদারল্যান্ডস এবং মেক্সিকোর মতো দেশ থেকে পণ্য আমদানির কথা ভাবছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কানাডার ভোটাররা এখন এমন একজন নেতাকে চান যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে পারবেন এবং দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবেন।

আগে যারা ছোট দলের সমর্থক ছিলেন, তারাও এখন প্রধান দলগুলোকে সমর্থন করছেন, যাতে সরকার শক্তিশালী হয় এবং দেশের হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

টবি গোরম্যান নামের একজন লেখক ও পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিক বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

যদিও তিনি সাধারণত গ্রিন পার্টিকে সমর্থন করেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তিনি এবার লিবারেল পার্টিকে ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন।

কানাডার নির্বাচনে সাধারণত বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বিভেদ দেখা যায়। তবে ট্রাম্পের নীতির কারণে এবার জাতীয়তাবোধের একটি ঢেউ উঠেছে।

অনেক কানাডিয়ান তাদের দেশের পতাকা উত্তোলন করছেন এবং “গর্বিত কানাডিয়ান” লেখা ব্যানার ব্যবহার করছেন।

পিটার হ্যামিল্টন নামের একজন রক্ষণশীল ভোটার জানান, তিনি সবসময় তার দেশকে ভালোবাসেন এবং দেশের জন্য গর্বিত। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এখন আগের মতো নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কানাডার সরকার এখন সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং নতুন অর্থনৈতিক অংশীদার খোঁজার চেষ্টা করছে।

তারা তাদের নাগরিকদের খাদ্যপণ্য কেনার সময় কানাডায় উৎপাদিত পণ্য বেছে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। তাদের মতে, এখন সময় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর এবং নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখার।

কানাডার আসন্ন নির্বাচন তাই শুধু একটি সাধারণ নির্বাচন নয়, বরং এটি তাদের জাতীয় পরিচয় এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *