কানাডার সিরিয়াল কিলারের শিকার আরেক নারীর দেহাবশেষ ল্যান্ডফিলে!

কানাডার একটি ল্যান্ডফিলে (ডাস্টবিন) সিরিয়াল কিলারের শিকার আদিবাসী নারীর দ্বিতীয় দেহাবশেষ সনাক্ত করেছে পুলিশ। দেশটির উইনিপেগ শহরের কাছে অবস্থিত এই ল্যান্ডফিলে ২০১৬ সাল থেকে আদিবাসী নারীদের হত্যা করে তাদের মরদেহ ফেলে দিতো জেরেমি স্কিবিকি নামের এক সিরিয়াল কিলার।

সোমবার (১৩ মে, ২০২৪) ম্যানিটোবা রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ল্যান্ডফিলে পাওয়া যাওয়া ২৬ বছর বয়সী মারসেডিস মাইরানের দেহাবশেষ সনাক্ত করা হয়েছে। মারসেডিসের পরিবারকে খবরটি জানানো হয়েছে এবং ম্যানিটোবা সরকার তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে সম্মান জানানোর জন্য অনুরোধ করেছে।

মারসেডিস লং প্লেইন ফার্স্ট নেশনের বাসিন্দা ছিলেন। ২০২২ সালে জেরেমি স্কিবিকি নামের ওই ব্যক্তি মারসেডিসকে হত্যা করে। চলতি বছরের জুলাই মাসে আদালত স্কিবিকিকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে।

বিচারক এই হত্যাকাণ্ডকে ‘ভয়াবহ’ এবং ‘বেদনাদায়ক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। গত সপ্তাহে, পুলিশ জানায় যে তারা একই ল্যান্ডফিলে ৩৯ বছর বয়সী মরগান হ্যারিসের দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছে।

নিহত অন্য এক নারীর পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি, তাকে ‘মাশকোদ বিজিকি’কুই’ (মহিষ নারী) নামে অভিহিত করা হচ্ছে। এছাড়া, রেবেকা কন্টয়েস নামে আরও এক নারীর দেহাবশেষ স্কিবিকির বাড়ির কাছে একটি ডাস্টবিনে পাওয়া গিয়েছিল।

তিনি ক্রেন রিভার ফার্স্ট নেশনের সদস্য ছিলেন। ২০২২ সালে প্রথম দিকে পুলিশ জানায়, ভুক্তভোগীদের কিছু মরদেহ ল্যান্ডফিলে পুঁতে রাখা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ জানায়, সেখানে অনুসন্ধান চালানো খুবই কঠিন হবে।

এরপর ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মরগান হ্যারিসের মেয়ে ক্যামব্রিয়া হ্যারিস সে সময় বলেছিলেন, “তারা (কর্তৃপক্ষ) বলছে এটা সম্ভব নয়।

কিন্তু মানুষগুলোর মরদেহ উদ্ধারের ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা কোনো বিষয় নয়।” পরে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দেখা করে ভুক্তভোগীদের মরদেহ খুঁজে বের করার জন্য অনুরোধ করেন।

এ বিষয়ে ম্যানিটোবার প্রাক্তন প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ প্রিমিয়ার হিদার স্টেফানসন প্রথমে ল্যান্ডফিলে তল্লাশি না চালানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “পরিবারগুলোর প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে।

এটি একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি, তবে আমি প্রিমিয়ার এবং আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমরা সেই সিদ্ধান্তে অটল আছি।” তবে তার এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন অনেকেই।

পরবর্তীতে, ফেডারেল ক্রাউন-আদিবাসী সম্পর্ক মন্ত্রী মার্ক মিলার এই সিদ্ধান্তকে ‘হৃদয়হীন’ বলে অভিহিত করে অনুসন্ধান চালানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন। ২০২৩ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে ল্যান্ডফিলে অনুসন্ধান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।

নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ওয়াব কিনেউ ল্যান্ডফিলে অনুসন্ধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এরপর ফেডারেল সরকার ভুক্তভোগীদের অনুসন্ধানের জন্য ৪০ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার (প্রায় ৩৩০ কোটি বাংলাদেশি টাকা) দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

ডিসেম্বর মাস থেকে ল্যান্ডফিলে খনন কাজ শুরু হয়েছে। অনুসন্ধানকারীরা প্রায় ২০,৩০০ ঘনমিটার বর্জ্য হাত দিয়ে এবং বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করছেন। বাইরের তাপমাত্রা যখন মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ছিল, তখনও কর্মীরা একটি বিশাল স্টিলের গরম ভবনে কাজ করে গেছেন।

অনুসন্ধানে প্রায় ৪৫ জন টেকনিশিয়ান কাজ করছেন। তাদের মধ্যে অর্ধেকই আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্য। ওয়াব কিনেউ বলেন, “এই প্রচেষ্টা একটি দেশের প্রতিচ্ছবি… বিভিন্ন স্তরের মানুষজন একত্রিত হয়ে পরিবারগুলোর জন্য সঠিক কাজটি করার চেষ্টা করছেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *