কানাডায় জয়! ট্রাম্পের হুমকিকে উড়িয়ে দিল লিবারেল পার্টি!

কানাডার নির্বাচনে জয়ী হয়েছে লিবারেল পার্টি, উদ্বিগ্ন বিশ্ব

কানাডায় অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেছে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি। প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নেতৃত্বে দলটি চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।

তবে এবার তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এই নির্বাচনে প্রধান ইস্যু ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং কানাডার প্রতি তার সম্ভাব্য আগ্রাসী মনোভাব।

নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর বিভিন্ন দেশের নেতারা এই জয়কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং গণতন্ত্রের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

নির্বাচনে লিবারেল পার্টি ১৬৮টি আসন লাভ করে। সরকার গঠনের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল ১৭২টি আসন।

অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি ১৪৪টি আসন পেয়েছে। নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্পের কিছু বক্তব্য ও পদক্ষেপ বেশ আলোচনার জন্ম দেয়।

তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম অঙ্গরাজ্য’ করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যা অনেকের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করে।

নির্বাচনে জয়ের পর কার্নি এক ভাষণে ট্রাম্পের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় কানাডার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ভূমি, সম্পদ ও জল চায়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের দুর্বল করতে চাইছেন, যাতে তারা আমাদের নিজেদের করে নিতে পারে।

কিন্তু এটা কখনোই হতে দেওয়া হবে না। একইসঙ্গে, আমাদের বুঝতে হবে যে, বিশ্ব এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাস্তবতার দিকে যাচ্ছে।”

কানাডার এই জয়কে স্বাগত জানিয়ে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা গণতন্ত্রের প্রতি তাদের সমর্থন এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতির প্রতি অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

জার্মানির প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ভন ডের লেয়েন বলেছেন, “ইউরোপ ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী হচ্ছে। আমরা আমাদের অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করব, বহুপক্ষীয়তাকে সমর্থন করব এবং অবাধ ও সুষ্ঠু বাণিজ্যকে উৎসাহিত করব।”

যুক্তরাজ্যের নেতা স্টারমার বলেছেন, “যুক্তরাজ্য ও কানাডা সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র, অংশীদার ও বন্ধু। আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে আপনার নেতৃত্বকে স্বাগত জানাই।

আমরা প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাব।”

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এক বার্তায় বলেছেন, “আপনারা সময়ের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে একটি শক্তিশালী কানাডার প্রতিচ্ছবি।

ফ্রান্স আমাদের দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বকে আরও জোরদার করতে চায়।”

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, “কানাডার নীতি-নির্ধারণী নেতৃত্বকে আমরা আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।

আমরা বিশ্বাস করি, শান্তি, ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার অভিন্ন লক্ষ্যে আমাদের অংশীদারত্ব আরও শক্তিশালী হবে।”

নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী রুটে বলেছেন, “কানাডার সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

আমি আগামী জুনে দ্য হেগে অনুষ্ঠিতব্য ন্যাটো সম্মেলনে কার্নিকে স্বাগত জানাতে আগ্রহী।”

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “ভারত ও কানাডা উভয়েই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসনের প্রতি অবিচল অঙ্গীকার এবং জনগণের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্কের দ্বারা আবদ্ধ।

আমি আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই, যাতে আমাদের অংশীদারত্ব আরও শক্তিশালী হয় এবং আমাদের জনগণের জন্য বৃহত্তর সুযোগ সৃষ্টি হয়।”

চীনের পক্ষ থেকেও এই জয়কে স্বাগত জানানো হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, “চীন পারস্পরিক সম্মান, সমতা ও পারস্পরিক লাভের ভিত্তিতে কানাডার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “মার্ক কার্নি কানাডার জন্য একজন শক্তিশালী নেতা হবেন, যিনি কানাডিয়ান ও আমেরিকানদের অভিন্ন মূল্যবোধ ও স্বার্থ রক্ষা করবেন।”

কানাডার এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কানাডার ভূমিকা কেমন হবে, সেদিকে এখন সবার দৃষ্টি।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *