কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ: প্রতিশোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে অটোয়ার সরকার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের ঘোষিত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে অটল থাকে, তাহলে এর জবাব দিতে প্রস্তুত কানাডা। আগামী ২ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা করছে দেশটি। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য এর আগে বিভিন্ন সময়ে কানাডার পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে। এমনকি, অটোমোবাইল ও যন্ত্রাংশ সহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা করে তিনি দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের মুক্ত বাণিজ্য নীতির অবসান ঘটিয়েছেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় কানাডা আগামী সপ্তাহ থেকে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। তবে, এই শুল্কের সময়সীমা বা পরিধি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির মধ্যে শুক্রবার অনুষ্ঠিত ফোনালাপকে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুই নেতাই নির্বাচনের পর একটি নতুন অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছেন। আগামী ২৮ এপ্রিল কানাডায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে, বাণিজ্য বিষয়ক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জরুরি বিষয়গুলো মোকাবিলায় দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনাও জোরদার করা হবে বলে জানা গেছে।
মার্কিন শুল্কের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নি সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এরই মধ্যে পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কানাডা সরকারের হাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ রয়েছে।
অতীতেও বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে উত্তেজনা দেখা গেছে। ট্রাম্প যখন কানাডার প্রায় সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তখন কানাডা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর মধ্যে ছিল দুগ্ধজাত পণ্য, মাংস, শস্য, ওয়াইন, বিয়ার, পোশাক, জুতা, মোটরসাইকেল, প্রসাধনী এবং কাগজ ও পাল্প জাতীয় পণ্য। পরিস্থিতি শান্ত না হলে কানাডা অতিরিক্ত ৮৬.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকিও দিয়েছিল।
বাণিজ্য যুদ্ধের বিষয়ে কানাডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর এক মন্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে ঝগড়া হওয়াটা আমাদের বিরোধীদের কাম্য।’
তবে, দুই দেশের নেতাদের মধ্যে সম্প্রতি হওয়া ফোনালাপের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে কোনো পক্ষেরই লাভ হয় না – এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কানাডার দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর ২৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্র কানাডা থেকে খুব সামান্য পরিমাণ দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি করে। তাই এই হুমকির তেমন কোনো প্রভাব নেই। অন্যদিকে, কানাডার কাঠ শিল্পের ওপর শুল্ক আরোপ করা হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যখন যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছিল, তখন ট্রাম্প ইইউর অ্যালকোহল পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। পরে অবশ্য ইইউ তাদের প্রতিশোধ স্থগিত করে এবং ট্রাম্পও তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন