কিশোরদের গাঁজা ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে, গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য!

কানাডায় গাঁজা (Cannabis) বৈধ করার পর কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এর ব্যবহার বেড়েছে, এমনটাই উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়।

দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে ভেষজ এই মাদক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পর, বিশেষ করে যারা খাদ্যযোগ্য গাঁজা বা ‘এডিবল’ সেবন করে, তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সম্প্রতি ‘জামা নেটওয়ার্ক ওপেন’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে কানাডার কুইবেক বাদে অন্যান্য প্রদেশে খাদ্যযোগ্য গাঁজা এবং নির্যাস বিক্রি ও ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পর, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে গাঁজার ব্যবহার ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১ লক্ষ ৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে, খাদ্যযোগ্য গাঁজা ব্যবহারের প্রবণতা ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই ধরনের খাদ্যপণ্যের সহজলভ্যতা এবং আকর্ষণীয় মোড়ক তরুণদের মধ্যে এর ব্যবহার বাড়াতে সহায়তা করেছে।

ক্যানাডা সরকার যদিও ১৮ বছরের কম বয়সীদের কাছে গাঁজা বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে, তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এটি তরুণদের কাছে মাদকটি আরও সহজলভ্য করে তুলেছে এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে তাদের ধারণা পরিবর্তনেও প্রভাব ফেলেছে।

গবেষণার প্রধান লেখক, নিউফাউন্ডল্যান্ড মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. হাই এনগুয়েন বলেন, “কিশোর বয়সে গাঁজা ব্যবহারের সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যগত প্রভাব সম্পর্কে আগের গবেষণাগুলোর আলোকে এই ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত গাঁজা সেবনকারী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে পরবর্তীতে আসক্তিজনিত সমস্যা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC)-এর মতে, অল্প বয়সে গাঁজা সেবন মস্তিষ্কের সেই অংশকে প্রভাবিত করতে পারে যা মনোযোগ, সমন্বয়, শেখা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

এছাড়া, এটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন—বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং সিজোফ্রেনিয়ার মতো দীর্ঘমেয়াদী মানসিক রোগের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, গাঁজা এবং অ্যালকোহল একসঙ্গে ব্যবহারের প্রবণতাও বেড়েছে, যা উভয় প্রকার মাদক গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদক ব্যবহারের ধারণা এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত আইনগুলি একটি জটিল বিষয়।

তাই, ভবিষ্যতের নীতি-নির্ধারণের জন্য জরিপের পাশাপাশি অন্যান্য গবেষণা পদ্ধতি প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

ড. এনগুয়েন মনে করেন, নীতিনির্ধারকদের উচিত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গাঁজার সহজলভ্যতা এবং তরুণদের সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

তিনি আরও বলেন, তরুণদের আকৃষ্ট করতে পারে এমন বিপণন এবং মোড়কের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

সেইসঙ্গে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি গাঁজা বিক্রেতাদের দোকান স্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং পরিবারে বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানদের খোলামেলা আলোচনা করাও জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদক ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে তরুণদের মধ্যে সঠিক ধারণা দেওয়া এবং তাদের সচেতন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এর মাধ্যমে তারা নিজেরাই তাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *