আবহাওয়ার চরম পরিবর্তনের কারণে আসন্ন গ্রীষ্মে কানাডায় ভয়াবহ দাবানলের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রে বায়ু দূষণের মারাত্মক কারণ হতে পারে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যেতে পারে যে, এর ফলে সেখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
উত্তর আমেরিকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে, যার ফলস্বরূপ দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যাও বাড়ছে।
কানাডার পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, আলবার্টা এবং সাসকাচুয়ান প্রদেশে দাবানলের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। শুষ্ক আবহাওয়া এবং শক্তিশালী বাতাসের কারণে এখানে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে।
কানাডার বন বিভাগের গবেষণা বিশ্লেষক ও আবহাওয়াবিদ রিচার্ড ক্যার জানান, সাধারণত মে মাস থেকে এখানে দাবানলের প্রকোপ বাড়ে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্চ-এপ্রিল মাস থেকেই কিছু ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।
ইতিমধ্যে, ১৩ই মে পর্যন্ত কানাডায় প্রায় ৩ লক্ষ একরের বেশি বনভূমি পুড়ে গেছে। যদিও গত বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ৪০ লক্ষ একরের বেশি, তবুও পরিস্থিতি উদ্বেগের কারণ।
কারণ, জুন ও জুলাই মাসে পশ্চিমা কানাডায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা এবং দাবানলের তীব্রতা দেখা যেতে পারে। এমনকি, আগস্ট মাসে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, যখন এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৫ মাত্রার তীব্র দাবানল দেখা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই বছরের দাবানলের কারণে সৃষ্ট ধোঁয়া কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের জনবহুল শহরগুলোতে বায়ু দূষণ ঘটিয়েছিল। এর ফলে সেখানকার আকাশ কমলা রঙ ধারণ করেছিল, যা এক ভয়াবহ দৃশ্যের সৃষ্টি করে।
শুধু তাই নয়, দাবানলের ধোঁয়াতে থাকা অতি ক্ষুদ্র কণা (PM2.5) মানুষের শ্বাসতন্ত্রের গভীরে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের রোগ এবং হৃদরোগের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের রাজ্যগুলোতেও এই ধোঁয়ার প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, দাবানলের ঝুঁকির দিক থেকে কানাডার পশ্চিমাঞ্চল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও, গ্রীষ্মকালে পশ্চিমা রাজ্যগুলোতে দাবানলের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরেও বায়ু দূষণ বাড়তে পারে।
আবহাওয়ার ধরন, যেমন – উচ্চচাপ বলয় (Heat Dome), যা সাধারণত গ্রীষ্মকালে পশ্চিমাঞ্চলে তৈরি হয়, তার কারণেও দাবানলের ধোঁয়া বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যেতে পারে। এছাড়া, ঝড়ো আবহাওয়ার কারণেও ধোঁয়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো আরো বাড়ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ২০০৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দাবানলের কারণে প্রায় ১৫,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া, অন্য একটি গবেষণা অনুযায়ী, আগামী ৩০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দাবানলের ধোঁয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ৭ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হতে পারে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ বছরে প্রায় ২৪৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ছে। আমাদের সকলেরই উচিত, এই বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং পরিবেশ সুরক্ষায় আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া।
তথ্য সূত্র: সিএনএন