অভিনেত্রী সীমান্তে আটকের পর ‘ভয়ংকর অভিজ্ঞতা’, কাঁদলেন?

কানাডার একজন অভিনেত্রী ও উদ্যোক্তাকে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষীদের হেফাজতে থাকতে হয়েছে। জানা গেছে, ৩৫ বছর বয়সী জ্যাসমিন মুনি নামের ওই অভিনেত্রী ‘ইনহিউম্যান’ বা অমানবিক পরিবেশে দিন কাটিয়েছেন।

তিনি অভিযোগ করেছেন, মার্কিন সীমান্ত কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেছে।

মুনি, যিনি ‘American Pie’ চলচ্চিত্র সিরিজে অভিনয় করেছেন এবং ‘হোলি! ওয়াটার’ নামক একটি পানীয় ব্র্যান্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, গত ৩ মার্চ ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোতে আটক হন।

তার আইনজীবীর মাধ্যমে জানা গেছে, মুনি এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ক ভিসা পেয়েছিলেন, কিন্তু নভেম্বরে তা বাতিল করা হয়। এরপর তিনি নতুন করে ভিসার জন্য আবেদন করার চেষ্টা করছিলেন।

কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বাসিন্দা মুনির মা অ্যালেক্সিস ঈগলস জানান, তার মেয়েকে মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের ব্যস্ততম ক্রসিং সান ইয়সিদ্রো সীমান্ত পার হওয়ার সময় আটক করা হয়।

ঈগলস আরও জানান, কর্তৃপক্ষ তার মেয়ের ভিসার আবেদন গ্রহণ না করে অথবা তাকে আবেদন সংশোধন করার সুযোগ না দিয়ে সরাসরি আটক করে।

মুনি পরে সাংবাদিকদের জানান, তাকে প্রথমে একটি ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছিল, যেখানে তিনি রাতের বেলা ঘুমানোর জন্য কোনো কম্বল বা বালিশ পাননি।

এমনকি বাথরুমের সুবিধাও ছিল সীমিত।

এরপর তাকে অন্য একটি ডিটেনশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল।

মুনি বলেন, “আমি আমার জীবনে এমন অমানবিক দৃশ্য দেখিনি।

আমাকে একটি সেলে রাখা হয়েছিল, যেখানে একটি ম্যাটের ওপর ঘুমাতে হতো, কোনো কম্বল বা বালিশ ছিল না।

আমার শরীরটি মৃতদেহের মতো অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল।”

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে মুনিকে হাতকড়া পরানো অবস্থায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো বলে অভিযোগ করেন তার মা।

গত সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে মুনি জানান, সেখানকার নিরাপত্তা রক্ষীরাও তার পরিস্থিতি দেখে অবাক হতেন।

তারা প্রায়ই বলতেন, ‘আপনি এখানে কী করছেন? আপনি তো কানাডিয়ান। এখানে আপনার থাকার তো কথা নয়!’

অবশেষে, মুনিকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং তিনি কানাডায় ফিরে আসেন।

ভ্যানকুভার বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এখনো সবকিছু গুছিয়ে উঠতে পারিনি।

আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি, খাবারও খেতে পারিনি।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আপনাদের সবার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।

আমি দুঃখিত যে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।

মনে হচ্ছে যেন একটি গভীর মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জগৎ থেকে আমি সবেমাত্র ফিরে এসেছি।”

এই ঘটনাটি ভিসা নিয়ে বিদেশ যেতে চাওয়া অনেক মানুষের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ।

অনেক বাংলাদেশিও উন্নত দেশগুলোতে কাজের ভিসা বা অন্য কোনো ভিসার জন্য আবেদন করেন।

ভিসা প্রক্রিয়াকরণে সামান্য ত্রুটি বা জটিলতা অনেক সময় দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তি ডেকে আনে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *