কানাডার একটি গভীর সমুদ্র খনন কোম্পানি, ‘দি মেটালস কোম্পানি’ (TMC), আন্তর্জাতিক জলভাগে খনিজ উত্তোলনের জন্য প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। পরিবেশবিদরা এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং এটিকে আন্তর্জাতিক নিয়মের পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
খবরটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন গভীর সমুদ্র খনন বন্ধের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে জোরালো দাবি উঠছে।
সংস্থাটি জাতিসংঘের (UN) একটি চুক্তিকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে খনন কাজের অনুমোদন নিতে চাইছে। টিএমসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেরার্ড ব্যারন এক বিবৃতিতে জানান, তাদের যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে এবং পরিবেশগত ঝুঁকিগুলো তারা মোকাবেলা করতে সক্ষম।
তিনি আরও বলেন, তাদের একটি উপযুক্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রয়োজন, যারা তাদের আবেদনটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।
বর্তমানে, আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষ (International Seabed Authority – ISA), যা জাতিসংঘের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, জামাইকাতে বৈঠকে মিলিত হয়েছে। এই বৈঠকে সমুদ্রের তলদেশ থেকে তামা ও কোবাল্টের মতো মূল্যবান ধাতু উত্তোলনের নিয়মাবলী নিয়ে আলোচনা চলছে।
নিয়ম তৈরি হওয়ার আগেই যদি কোনো খনন আবেদনের প্রস্তাব আসে, তাহলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে বিষয়েও তারা আলোচনা করছেন। যদিও, আইএসএ জানিয়েছে, তাদের নিয়ম চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো আবেদন বিবেচনা করা হবে না।
টিএমসি’র পরিকল্পনা হলো, তারা সরাসরি আইএসএ’র পরিবর্তে ১৯৮০ সালের ‘ডিপ সিবেড হার্ড মিনারেল রিসোর্সেস অ্যাক্ট’-এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের কাছে আবেদন করবে। কোম্পানিটি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে এবং এরই মধ্যে মেক্সিকো ও হাওয়াই দ্বীপের মাঝে অবস্থিত ক্ল্যারিওন-ক্লিপারটন অঞ্চলে তাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়েছে।
এই অঞ্চলে পলিমালিক মেটালিক নুডুলস-এর (বহু মূল্যবান খনিজ সমৃদ্ধ পাথরের স্তর) বিপুল ভাণ্ডার রয়েছে, সেই সঙ্গে অনেক নতুন প্রজাতিরও সন্ধান পাওয়া গেছে।
পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরিপন্থী। গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনালের কর্মী লুইসা ক্যাসন বলেছেন, “এটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি চরম অবজ্ঞা।”
ডিপ সি কনজারভেশন কোয়ালিশনের আইন উপদেষ্টা ডানকন করি গভীর সমুদ্র খনন বন্ধের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। কোস্টারিকার প্রতিনিধি জর্জিনা মারিয়া গুইলেন গ্রিলো এই পদক্ষেপকে ‘সম্পূর্ণভাবে অনুচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন।
গভীর সমুদ্র খননের এই উদ্যোগ পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই, অনেক দেশ এই ধরনের খনন কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ জারির পক্ষে মত দিয়েছে।
কারণ, তাদের মতে, সমুদ্রের গভীরে খনিজ উত্তোলনের আগে পর্যাপ্ত তথ্য ও উপযুক্ত নিয়ম তৈরি করা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান