বিশ্ব সিরিজ: খেলা দেখতে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছেন কানাডীয়রা!

কানাডার নাগরিকদের মধ্যে অনেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধের কারণে দেশটিতে ভ্রমণ করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু টরন্টো ব্লু জয়েস দলের প্রতি ভালোবাসার টানে তারা সবাই যেন সেই নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছিলেন।

সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত হওয়া ওয়ার্ল্ড সিরিজ (বেসবল চ্যাম্পিয়নশিপ) খেলা দেখতে ভিড় করেন তারা।

ভ্যাঙ্কুভারের আইনজীবী গ্রান্ট মারে, যিনি আগে প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রে যেতেন, বাণিজ্য বিরোধের কারণে ব্যক্তিগতভাবে দেশটি বয়কট করা শুরু করেন। কিন্তু দেশের প্রতি ভালোবাসার থেকেও তার প্রিয় ছিল টরন্টো ব্লু জয়েস।

তাই অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা ভাই কেভিনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসের ডজার্স স্টেডিয়ামে যান, যেখানে ওয়ার্ল্ড সিরিজের খেলা চলছিল।

গ্রান্ট মারের মতে, “কানাডার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। আমি সংহতিকে সমর্থন করি, কিন্তু ব্লু জয়েসকে সমর্থন করার কারণে আমি সম্ভবত ভণ্ড হয়ে গেছি।”

শুধু গ্রান্ট মারে একা নন, অনেকেই এই বছর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করা থেকে বিরত ছিলেন। সাধারণত, কানাডিয়ানরাই যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করে।

ইউএস ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ২ কোটি ২০ লক্ষ কানাডিয়ান যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, এই বছর সেই সংখ্যা কমে ১ কোটি ৫৭ লক্ষে দাঁড়াবে, যা প্রায় ২২ শতাংশ হ্রাস।

যদিও ওয়ার্ল্ড সিরিজের খেলা এই ক্ষতির পরিমাণ পূরণ করতে পারবে না, তবে এটি কিছু কানাডিয়ানকে ভ্রমণে উৎসাহিত করেছে।

টিকিট বিক্রির সংস্থা স্টাবহাবের হিসাব অনুযায়ী, লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড সিরিজের তিনটি খেলার টিকিটের প্রায় ৮ শতাংশ কিনেছিলেন কানাডিয়ানরা।

মেজর লিগ বেসবলের (এমএলবি) অফিসিয়াল রিসেলার সিটগীক-এর হিসাব অনুযায়ী, লস অ্যাঞ্জেলেসের খেলাগুলোর টিকিটের প্রায় ৩ শতাংশ বিক্রি হয়েছে কানাডিয়ানদের কাছে।

ভ্যাঙ্কুভারে বসবাসকারী গ্রান্ট মারের জন্য টরন্টোর চেয়ে সিয়াটলে ব্লু জয়েসের খেলা দেখা সহজ ছিল। এমনকি তিনি নিয়মিত মৌসুমের খেলাগুলোও সেখানে যাননি।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শহরগুলোতেও তিনি তার দলের খেলা দেখতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

লস অ্যাঞ্জেলেসে খেলা দেখা মারের জন্য টরন্টোর চেয়ে সস্তা ছিল। ভ্রমণের খরচ কম ছিল এবং টরন্টোর টিকিটের দাম অনেক বেশি ছিল।

লস অ্যাঞ্জেলেসে স্টেডিয়াম বড় হওয়ায় তিনি স্বাভাবিক দামেই টিকিট পেয়েছিলেন।

টরন্টো থেকে আসা জ্যাত ইয়াসিন বলেন, “আমরা ওখানে (টরন্টোতে) টিকিট পাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সেগুলো দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়।

এরপর রিজার্ভ মার্কেটের টিকিট প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছিল।” সিটগীকের তথ্য অনুযায়ী, খেলাগুলোর গড় টিকিটের দাম ছিল প্রায় ১,৪০০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,৫২,০০০ টাকা)।

তবে সবচেয়ে দামি সিটের কারণে এই গড় বেড়েছিল। সর্বনিম্ন মূল্যের টিকিট টরন্টোতে প্রায় ৪০০ ডলারে (প্রায় ৪৩,০০০ টাকা) এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে ৩০০ ডলারে (প্রায় ৩২,৫০০ টাকা) বিক্রি হয়েছিল।

টরন্টোর বাসিন্দা, বর্তমানে নিউইয়র্কের শহরতলিতে বসবাসকারী শিমোন সিটজার জানান, তিনি খেলায় আসা অন্যান্য কানাডিয়ান ভক্তদের সঙ্গে দেখা করেছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ এড়িয়ে চলছিলেন, কিন্তু খেলা দেখার জন্য এসেছিলেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *