মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ায় ক্যান্সার ও হৃদরোগের চিকিৎসায় জড়িত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগুলি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (এনআইএইচ) নামক সরকারি সংস্থাটি নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষণা খাতে অর্থ সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে, যার প্রধান কারণ হিসেবে জানা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ।
এই সিদ্ধান্তের ফলে হৃদরোগ ও ক্যান্সারের চিকিৎসায় সহায়ক বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা রোগীর ওপর পরীক্ষামূলক চিকিৎসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, এই অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগীদের চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এর ফলে, ইতিমধ্যে গবেষণায় যুক্ত থাকা রোগীদের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, গবেষণা মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেলে এর ফলাফলও অকার্যকর হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
গবেষণার জন্য ইতিমধ্যে যেসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে, সেগুলোও কোনো কাজে আসবে না।
নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে তাদের হাতে ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য আসার সম্ভাবনা নেই। ফলে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই গবেষণা খাতে অর্থ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে হৃদরোগের একটি গবেষণা, যেখানে “অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন” (এএফিব) নামক হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছিল। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল, রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমাতে রোগীদেরকে নিয়মিত ওষুধ সেবনের পরিবর্তে, প্রয়োজনে ওষুধ ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা।
এই গবেষণায় প্রায় ১,৭০০ জনের বেশি রোগী অংশ নিয়েছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই গবেষণা সফল হলে হৃদরোগের চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। কারণ, এর মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসার ধরন পরিবর্তন করা সম্ভব হবে এবং একই সাথে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কমানো যাবে।
কিন্তু অর্থায়নের অভাবে এখন সেই সম্ভবনা হুমকির মুখে।
শুধু হৃদরোগ নয়, মস্তিষ্কের ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং শিশুদের ক্যান্সারের চিকিৎসাসংক্রান্ত গবেষণাগুলোও এখন ঝুঁকির সম্মুখীন। এর মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন নতুন পদ্ধতির পরীক্ষাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি গবেষণায় ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ মেটফর্মিন ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে কতটা কার্যকর, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া, বংশগত কারণে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের জন্য একটি বিশেষ ভ্যাকসিন নিয়েও গবেষণা চলছে।
চিকিৎসকরা মনে করছেন, সরকারের এই পদক্ষেপের কারণে চিকিৎসা গবেষণার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। কারণ, অনেক রোগী এই ট্রায়ালগুলোর ওপর নির্ভরশীল এবং গবেষণা বন্ধ হয়ে গেলে তারা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবেন।
এই ঘটনার শিকার হওয়া একজন রোগী অ্যাঞ্জেলিনা ব্রাউন। তিনি বলেন, “আমি হতাশ হব, যদি এই গবেষণা বন্ধ হয়ে যায়।” কারণ, এই গবেষণার মাধ্যমে তিনি ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি, এই গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনেক মানুষ আছেন যাদের হয়তো সবসময় ঔষধের প্রয়োজন হয় না।”
এই পরিস্থিতিতে, গবেষকরা অর্থ সংগ্রহের জন্য অন্যান্য উপায় খুঁজছেন, যাতে গবেষণাগুলো চালু রাখা যায়। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, গবেষণাগুলো বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন