ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করা এক নারীর জীবনে এক অচেনা মানুষের ছোট্ট একটি মন্তব্য কিভাবে বিশাল পরিবর্তন এনেছিল, সেই গল্প শুনলে চোখে জল আসতে বাধ্য। আলাানা ভিজ্জোনি নামের ২৮ বছর বয়সী এক তরুণী ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা শেষে যখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরছিলেন, ঠিক তখনই ঘটে এই ঘটনা।
আলাানা জানান, এপ্রিল মাসে তিনি তার বাগদত্তের সঙ্গে ডিনারে গিয়েছিলেন। তখনও তিনি ক্যান্সার চিকিৎসার ধকল থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। কয়েক মাস আগেই তার কেমোথেরাপি শেষ হয়েছিল, যার কারণে তিনি চুল হারিয়েছিলেন।
সেই রাতে তিনি প্রথমবারের মতো কোনো টুপি বা উইগ ছাড়া বাইরে বেরিয়েছিলেন। এমন সময় এক অপরিচিত ব্যক্তি তার চুলের প্রশংসা করেন। সেই মুহূর্তে আলাানার মনে হয়েছিল, যেন তিনি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্তের সাক্ষী থাকছেন।
“কেমোথেরাপি শুরু করার পর থেকেই আমি এই দিনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম,” জুমের মাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান। “আমি জানতাম চুল পড়বে, আর সেই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম, যেদিন আবার আগের মতো চুল নিয়ে বাইরে যেতে পারব।”
আলাানা আরও বলেন, “নিজের পরিচিতি ফিরে পাওয়াটা কতটা জরুরি, তা হয়তো অনেকেই বুঝতে পারে না। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে সুন্দর দেখতে লাগাটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।
অন্যদের চোখে কেমন দেখাচ্ছি, সেই চিন্তা আমাকে সব সময় তাড়িয়ে বেড়াতো। অসুস্থ দেখালে বা কেউ যদি আমার চুলের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে শুরু করে, সেই ভয়ে আমি কুঁকড়ে থাকতাম। তাই যখন একজন অচেনা মানুষ আমার চুলের প্রশংসা করল, তখন মনে হলো, আমি যেন জীবনের যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছি।”
২০২৪ সালের ১লা মার্চ আলাানার স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এর আগে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে তার বাগদত্ত (তখন বন্ধু) তার বাম স্তনে একটি নীল রঙের ফোলা দেখেন। শুরুতে আলাানা খুব একটা চিন্তিত ছিলেন না।
তবে তার বাগদত্তের পরামর্শে তিনি ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তাররা প্রথমে এটিকে নিরীহ টিউমার হিসেবে চিহ্নিত করেন।
কিন্তু কয়েক মাস পর, আলাানার মনে হয়, “কিছু একটা ভুল হচ্ছে।” তিনি আবারও ডাক্তারের কাছে যান এবং আলট্রাসাউন্ড করার কথা বলেন। পরীক্ষার পর জানা যায়, তিনি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত।
এরপর দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়। প্রথমে অস্ত্রোপচার করে টিউমার অপসারণ করা হয় এবং পরে তিনি কেমোথেরাপি শুরু করেন।
চিকিৎসার সময় আলাানার ৯০ শতাংশ চুল পড়ে যায়। তিনি বলেন, “আমি সুস্থ ছিলাম, স্বাস্থ্যবান ছিলাম, কিন্তু হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়লাম। এটা মেনে নেওয়া কঠিন ছিল।”
আলাানা ধীরে ধীরে তার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে তার রোগ সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করেন। তিনি ‘ফাইভ আন্ডার ফর্টি’ নামের একটি সংস্থার কাছ থেকে সাহায্য পান, যারা তাকে একটি উইগ (periwig) সরবরাহ করে, যা তিনি চিকিৎসার সময় ব্যবহার করেছেন।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে তিনি টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে ভিডিও শেয়ার করতে শুরু করেন।
আলাানা জানান, “আমি কাউকে লুকিয়ে রাখতে চাইনি। আমি সবার সঙ্গে এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে চেয়েছি। আমি চেয়েছিলাম, মানুষ জানুক, এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আমি এমন কাউকে খুঁজছিলাম, যে আমার কয়েক বছর আগে এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছে এবং আমাকে সাহস দিতে পারে। আমি এখন সেই কাজটিই করছি।”
ক্যান্সারমুক্ত হওয়ার পর, আলাানার পরিবার ও বন্ধুরা তার জন্য একটি পার্টি আয়োজন করে, যেখানে তার বাগদত্ত তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। বর্তমানে তিনি ক্যান্সারমুক্ত জীবন যাপন করছেন এবং আগামী পাঁচ বছর ধরে তাকে হরমোন-নিরোধক ওষুধ সেবন করতে হবে।
আলাানা আরও বলেন, “অনেকেই আমাকে মেসেজ করে বলে, ‘আমিও এই রোগে আক্রান্ত এবং তোমার ভিডিওগুলো দেখে মনে হয়, আমি ভালো হয়ে উঠব।’ এটা আমাকে অনেক আনন্দ দেয়।”
সম্প্রতি, আলাানা সেই অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে হওয়া কথোপকথনের ভিডিও শেয়ার করেছেন। মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি এখনো সেই কথাগুলো মনে করে কেঁদে ফেলি। সেই নারীর একটি সাধারণ মন্তব্য আমার জীবনে এত বড় পরিবর্তন এনেছিল।”
ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হয় এবং কয়েক হাজার মানুষ এর প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এই কারণেই দয়া এত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি জানেন না, আপনার সামান্য দয়াই অন্য কারো জন্য কতটা মূল্যবান হতে পারে।”
তথ্যসূত্র: পিপলস