কান চলচ্চিত্র উৎসব: চলচ্চিত্র জগতের এক বিশাল মিলনমেলা, উদ্বেগে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতি
আসন্ন কান চলচ্চিত্র উৎসব, যা চলচ্চিত্রের বিশ্বমঞ্চ হিসেবে পরিচিত, আবারও বিশ্বজুড়ে সিনেমাপ্রেমীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে প্রস্তুত। আগামী সপ্তাহে এই উৎসবের ৭৮তম আসর বসতে চলেছে ফ্রান্সের কান শহরে।
বিশ্ব চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই উৎসব, যেখানে চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাঁদের কাজ নিয়ে আসেন, আর চলচ্চিত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ছবি কেনাবেচার জন্য একত্রিত হন। তবে এবার উৎসবের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণার কারণে তৈরি হয়েছে উদ্বেগের পরিস্থিতি।
কান চলচ্চিত্র উৎসব যেন এক বিশাল ‘সিনেমার অলিম্পিক’। এখানে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য দেওয়া হয় ‘পাম ডি’ও’ পুরস্কার, যা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে অত্যন্ত সম্মানজনক।
সারা বিশ্ব থেকে নির্মাতারা তাঁদের ছবি নিয়ে আসেন, আর বিভিন্ন দেশের পরিবেশকরা ছবিগুলো কিনে নিজেদের দেশে মুক্তি দেওয়ার জন্য চুক্তি করেন। ব্রাজিলিয়ান পরিচালক ক্লিবার মেন্ডোকা ফিলহো, যিনি তাঁর নতুন ছবি ‘দ্য সিক্রেট এজেন্ট’ নিয়ে উৎসবে যোগ দিচ্ছেন, কান চলচ্চিত্র উৎসবের এই পরিবেশকে একটি ‘যুদ্ধক্ষেত্রের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর মতে, এখানে টিকে থাকতে হলে প্রস্তুত থাকতে হয়।
এবারের উৎসবে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বহু প্রতীক্ষিত সিনেমা, যেখানে স্পাইক লি, ওয়েস অ্যান্ডারসন, লিন র্যামসে, রিচার্ড লিংকলেটার এবং আরি অ্যাস্টারের মতো খ্যাতিমান পরিচালকদের কাজ প্রদর্শিত হবে।
জেনিফার লরেন্স, ডেনজেল ওয়াশিংটন, রবার্ট প্যাটিনসন এবং ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টের মতো তারকারা এই উৎসবে অংশ নেবেন।
কান চলচ্চিত্র উৎসব শুধু সিনেমার প্রদর্শনীই নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়গুলোও আলোচনা করা হয়।
এবারও ইরানের ভিন্নমতাবলম্বী চলচ্চিত্র নির্মাতা জাফর পানাহি, ইউক্রেনীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা সের্গে লোজনিৎসাসহ বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাঁদের ছবি নিয়ে আসছেন।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে ছবি জমা দেওয়া নির্মাতাদের জন্য একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। দক্ষিণ আফ্রিকার চলচ্চিত্র নির্মাতা অলিভার হারমানাস তাঁর নতুন ছবি ‘দ্য হিস্টোরি অফ সাউন্ড’-এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, “কানে ছবি নির্বাচন হওয়া আমার জন্য, আমার দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” জাপানি চলচ্চিত্র নির্মাতা চিহাই হায়াকাওয়া তাঁর ছবি ‘রেনোয়ার’-এর মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বিভাগে প্রথমবার অংশ নিচ্ছেন। তিনি জানান, এই উৎসবে যোগ দেওয়া তাঁর কাছে অনেক সম্মানের।
তবে এবারের উৎসবের একটি বড় উদ্বেগের কারণ হল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বাণিজ্যের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের ঘোষণা। যদিও এই বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি, তবে এমনটা হলে তা চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হবে।
ক্লিবার মেন্ডোকা ফিলহো মনে করেন, এমন সিদ্ধান্ত সম্ভবত ভুল বোঝাবুঝির ফল, যা দ্রুত সমাধান করা হবে।
কান চলচ্চিত্র উৎসব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইতালির ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের বিকল্প হিসেবে শুরু হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে এটি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য মঞ্চ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
টম ক্রুজ, রবার্ট ডি নিরো এবং কুইন্টিন টারান্টিনোর মতো খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতারাও এই উৎসবে অংশ নেবেন।
কান চলচ্চিত্র উৎসব চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সিনেমা, সংস্কৃতি এবং ব্যবসার এক দারুণ মেলবন্ধন ঘটে। প্রতি বছর এখানে চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাঁদের নতুন কাজ নিয়ে আসেন, আর সিনেমাপ্রেমীরা উপভোগ করেন অসাধারণ সব চলচ্চিত্র।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস