কান চলচ্চিত্র উৎসব: বিশ্বায়ন আর স্থানীয় সংস্কৃতির দ্বন্দ্বে সিনেমার ভবিষ্যৎ
সিনেমা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি একটি শক্তিশালী প্রতিচ্ছবি, যা সমাজের নানা দিক তুলে ধরে। কান চলচ্চিত্র উৎসব, যেখানে বিশ্বের সেরা সিনেমাগুলো প্রদর্শিত হয়, সেই প্রেক্ষাপটে বিশ্বায়ন ও স্থানীয় সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
একদিকে যেমন হলিউডের বিশাল বাজেটের সিনেমাগুলো বিশ্বজুড়ে দর্শকদের মন জয় করে, তেমনই বিভিন্ন দেশের নির্মাতারা তাদের অঞ্চলের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রাকে সিনেমার পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন। এই দুই ধারার সিনেমাই বর্তমানে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কথা অনেকেরই জানা। তার মতে, বিদেশি ফিল্ম নির্মাতাদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।
কান চলচ্চিত্র উৎসবেও এর প্রভাব দেখা যায়। এখানে একদিকে যেমন বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সিনেমার নির্মাতারা তাদের ছবি নিয়ে আসেন, তেমনই হলিউডের প্রভাবশালী প্রযোজকরাও উপস্থিত থাকেন। তবে ট্রাম্পের নীতির কারণে অনেক প্রযোজক এখন তাদের সিনেমা নির্মাণের জন্য অন্য দেশগুলোতে ঝুঁকছেন, যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের কর ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
ফ্রান্সের একটি সিনেমার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, যেখানে একজন শেফ তার শিকড়ের টানে প্যারিস ছেড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাবার রেস্টুরেন্টে ফিরে যান। এই সিনেমাটি যেন স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসারই প্রতীক।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে এমন অনেক সিনেমা দেখা যায়, যেগুলোতে কোনো অঞ্চলের সংস্কৃতি, মানুষের জীবনযাত্রা, এবং তাদের সংগ্রামের গল্প তুলে ধরা হয়। জার্মানির একটি সিনেমায় দূরবর্তী স্থানে আটকে পড়া মানুষের গল্প বলা হয়েছে, আবার স্কটল্যান্ডের এক সিনেমায় এক নারীর কঠিন জীবন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
অন্যদিকে, বিশ্বায়নের যুগে তৈরি হওয়া সিনেমাগুলো সাধারণত একাধিক দেশে চিত্রায়িত হয় এবং এর গল্পগুলোও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়।
উদাহরণস্বরূপ, মিশন ইম্পসিবল সিরিজের নতুন কিস্তি বা ওয়েস্ট অ্যান্ডারসনের সিনেমাগুলো বিভিন্ন দেশে তৈরি হয়েছে এবং এর গল্পগুলোও বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, হলিউডের বড় বাজেটের সিনেমাগুলোও তাদের গল্পের প্রয়োজনে অন্য দেশের সংস্কৃতিকে ব্যবহার করছে।
বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো এখন তাদের দেশে সিনেমা নির্মাণের জন্য প্রযোজকদের আকৃষ্ট করতে চাইছে। এর কারণ, সিনেমা নির্মাণে বিদেশি বিনিয়োগ আসলে সেই দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। হাঙ্গেরি এক্ষেত্রে বেশ সফল।
তারা তাদের দেশে সিনেমা নির্মাণের জন্য কর ছাড়ের পাশাপাশি দক্ষ ও কম খরচে কর্মী সরবরাহ করে।
তাহলে সিনেমার ভবিষ্যৎ কী? স্থানীয় সংস্কৃতি নাকি বিশ্বায়ন? কান চলচ্চিত্র উৎসব যেন এই প্রশ্নেরই একটি মঞ্চ।
হয়তো ভবিষ্যতে আমরা দেখব, সিনেমা নির্মাতারা তাদের গল্প বলার জন্য একটি মাঝামাঝি পথ বেছে নিচ্ছেন, যেখানে স্থানীয় সংস্কৃতি ও বিশ্বায়নের একটি মিশ্রণ থাকবে। এমন সিনেমায় একদিকে যেমন একটি অঞ্চলের সংস্কৃতি গুরুত্ব পাবে, তেমনই বিশ্বজুড়ে দর্শকদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান