**যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ির দামে ঊর্ধ্বগতি: বাংলাদেশের জন্য গণপরিবহনে বিনিয়োগের সুযোগ?**
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক গাড়ির ওপর শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের কারণে সেখানকার বাজারে গাড়ির দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে, দেশটির গণপরিবহন ব্যবস্থা, যেমন বাস ও ট্রেনের ব্যবহার বাড়ছে, যা একটি নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গাড়ির দাম বাড়ার ফলে সাধারণ মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে গণপরিবহনের দিকে ঝুঁকবে।
যুক্তরাষ্ট্রে পরিবহন খরচ একটি পরিবারের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যয়, যা সাধারণত মোট খরচের ১৫ শতাংশ। গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারের খরচ অনেক বেশি হওয়ায়, বিশেষ করে কম আয়ের পরিবারগুলোর উপর এর চাপ পড়ে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, কম আয়ের আমেরিকানরা তাদের আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ পরিবহন খাতে ব্যয় করে। গাড়ির ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থতার হারও বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গাড়ির দাম বাড়লে মানুষ গণপরিবহনকে একটি বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে হিসাব করা হয়েছে যে, একজন আমেরিকান যাত্রী গণপরিবহন ব্যবহার করলে বছরে ১৩,০০০ ডলারের বেশি সাশ্রয় করতে পারে।
শুল্কের কারণে সবচেয়ে সস্তা মার্কিন গাড়ির দামও ২,৫০০ থেকে ৫,০০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা সামগ্রিকভাবে গাড়ির দামে প্রায় ১৩.৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি ঘটাবে।
তবে, এই মূল্যবৃদ্ধি ধনী পরিবারগুলোর নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্তে হয়তো তেমন প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু কম আয়ের পরিবার এবং প্রথমবার গাড়ি কিনতে চাওয়া তরুণদের জন্য এটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
গণপরিবহনের ব্যবহার বাড়লে পরিবেশের উপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ, পরিবহন খাত যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রধান উৎস। ব্যক্তিগত গাড়ির তুলনায় বাস ও ট্রেন ব্যবহার করলে যাত্রী প্রতি কার্বন নিঃসরণ দুই-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, অর্থনৈতিক সংকটের সময় মানুষ গণপরিবহনের দিকে ঝুঁকেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সরকার যখন ব্যক্তিগত গাড়ির উৎপাদন বন্ধ করে দেয়, তখন গণপরিবহনের ব্যবহার বাড়ে।
সত্তরের দশকে জ্বালানি সংকটের সময়ও অনেকে গণপরিবহন ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
গণপরিবহন সংস্থাগুলোর জন্য এই পরিস্থিতি সুযোগ নিয়ে আসতে পারে। তবে, উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য স্থানীয়, রাজ্য এবং ফেডারেল সরকারগুলোকে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে সড়কের উন্নয়নের তুলনায় গণপরিবহনে বিনিয়োগ অনেক কম হয়। ফেডারেল সরকারের দেওয়া অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের ৮০ শতাংশ সড়ক খাতে এবং ২০ শতাংশ গণপরিবহন খাতে ব্যয় করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শহরে এরই মধ্যে গণপরিবহন খাতে অর্থায়নের জন্য প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। জনগণের সমর্থন পেলে ভবিষ্যতে আরও বেশি সংখ্যক শহরে গণপরিবহন উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশও শিক্ষা নিতে পারে। বাংলাদেশেও গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি।
যানজট, পরিবেশ দূষণ এবং ক্রমবর্ধমান জ্বালানি মূল্যের কারণে গণপরিবহনের গুরুত্ব বাড়ছে। উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা তৈরি করতে পারলে, তা একদিকে যেমন মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে, তেমনি পরিবেশের সুরক্ষাতেও সহায়তা করবে।
তথ্য সূত্র: CNN