গাড়ির দাম বাড়ছে না! এখনই কেনার সেরা সময়?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি শুল্ক জারির পরও গাড়ির দামে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে, বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুব শীঘ্রই দাম বাড়তে শুরু করবে।

এখন তাহলে গাড়ি কেনার সঠিক সময় কি?

এপ্রিল মাস থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর মার্কিন গাড়ি ক্রেতারা ক্ষতির আশঙ্কায় ছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

Edmunds.com নামক একটি গাড়ি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইভান ড্রিউরি জানান, “দাম বাড়ার যে সম্ভাবনা ছিল, বাস্তবতার সঙ্গে তার মিল নেই। তবে আমার মনে হয়, আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে দাম বাড়তে শুরু করবে।”

আমদানি করা গাড়ি এবং যন্ত্রাংশের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলেও দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। Edmunds-এর তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে নতুন গাড়ির গড় দাম আগের মাসের তুলনায় ০.২ শতাংশ কমেছে।

মার্চ মাসের তুলনায় দাম বেড়েছে মাত্র ২.৫ শতাংশ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মৌসুমী প্রভাব সমন্বিত করার পর মে মাসে নতুন এবং ব্যবহৃত উভয় গাড়ির দাম কমেছে।

দাম স্থিতিশীল থাকার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এপ্রিল ও মে মাসে শুল্কের কারণে ক্রেতারা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, ফলে চাহিদা কমে যাওয়ায় ডিলারদের দাম বাড়ানোর সুযোগ হয়নি।

এছাড়া, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাড়ি শিল্পও ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বিবাদে জড়াতে চাইছে না, তাই দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে তারা সতর্ক।

ডিলাররা মূলত শুল্ক আরোপের আগের মজুদকৃত গাড়ি বিক্রি করছেন। ড্রিউরি জানান, এপ্রিল মাস থেকে শুল্ক আরোপের পর যে গাড়িগুলো বিক্রি হয়েছে, তার অধিকাংশই হয় আমদানি করা, অথবা শুল্কের আগে তৈরি করা হয়েছিল।

মার্চ মাসে বিভিন্ন গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানির কাছে ৩০ থেকে ৭৭ দিনের সরবরাহ মজুত ছিল। এছাড়া, ক্রেতাদের চাহিদাও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।

মার্চ মাসে শুল্কের আগেই কিছু ক্রেতা গাড়ি কিনেছিলেন, ফলে প্রথম প্রান্তিকে বিক্রি বেড়ে যায় এবং এরপর চাহিদা কমে যায়।

অর্থনৈতিক মন্দা এবং চাকরির নিরাপত্তা নিয়েও অনেকে উদ্বেগে আছেন, যার কারণে অনেকে বড় ধরনের গাড়ি কেনা থেকে বিরত থাকছেন।

Edmunds এখনো দ্বিতীয় প্রান্তিকের বিক্রয় পূর্বাভাস জানায়নি, তবে ড্রিউরি মনে করেন, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বিক্রি কমে যেতে পারে বা স্থিতিশীল থাকতে পারে।

তবে, দাম না বাড়ার কারণে ক্রেতারা হয়তো আবারও গাড়ি বাজারে ফিরতে পারেন। মে মাসে প্রকাশিত কনফারেন্স বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ১২.১ শতাংশ মার্কিন নাগরিক নতুন গাড়ি কেনার কথা ভাবছেন।

এপ্রিল মাসে এই সংখ্যা ছিল ১০.৬ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খুব শীঘ্রই গাড়ির দাম বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিই শুল্কের আওতায় পড়েছে। শুধুমাত্র টেসলা বাদে, প্রায় সব বড় কোম্পানিই তাদের গাড়ি বাইরে থেকে আমদানি করে।

S&P Global Mobility-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া গাড়ির ৪৬ শতাংশই ছিল আমদানি করা।

এমনকি, স্থানীয়ভাবে তৈরি হওয়া গাড়ির যন্ত্রাংশও বাইরে থেকে আসে।

ড্রিউরি জানান, কিছু প্রস্তুতকারক এরই মধ্যে দাম না বাড়িয়ে বিভিন্ন ফি যোগ করা বা ক্রেতাদের জন্য অফার কমানোর মতো কৌশল অবলম্বন করছেন।

তবে, শুল্কযুক্ত গাড়ি বাজারে আসলে তারা সম্ভবত এই খরচ ক্রেতাদের উপর চাপাতে বাধ্য হবেন।

গাড়ির দাম প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো নির্ধারণ করে না, বরং ডিলার ও ক্রেতাদের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে তা নির্ধারিত হয়।

তবে, কোম্পানিগুলো একটি ‘প্রস্তুতকারকের প্রস্তাবিত খুচরা মূল্য’ (MSRP) নির্ধারণ করে থাকে।

ব্যাংক অফ আমেরিকার গাড়ি বিশ্লেষক অ্যাডাম জোনাস মনে করেন, ২০২৬ মডেলের গাড়ি বাজারে আসার সময় কোম্পানিগুলো MSRP বাড়াতে পারে।

জোনাস সম্প্রতি ব্যাংক অফ আমেরিকার একটি সম্মেলনে বলেন, “আমরা ধীরে ধীরে দাম বাড়ানোর ঘোষণা শুনতে পাচ্ছি। আমার মনে হয়, ২০২৬ মডেলের পরিবর্তনের সঙ্গে কোম্পানিগুলো নতুন গাড়ির দাম বাড়াবে, যাতে তারা কোনো বিতর্কের শিকার না হয়।”

অন্যদিকে, ড্রিউরি মনে করেন, কোম্পানিগুলো দাম বাড়ালেও শুল্কের বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকবে।

কারণ, এমনটা করলে কোনো লাভ হয় না বলেই তারা মনে করে।

এই খবরটি সরাসরিভাবে বাংলাদেশের গাড়ি বাজারের উপর প্রভাব ফেলবে না।

তবে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং শুল্কনীতি সম্পর্কে আগ্রহী পাঠকদের জন্য এটি একটি প্রাসঙ্গিক বিষয় হতে পারে।

এছাড়া, যারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন বা সেখানে গাড়ি কেনার পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য এই তথ্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *