গাড়ির মেরামত খরচ বাড়ছে, উদ্বেগে গাড়ির মালিকরা
গাড়ি কেনা এখনো অনেকের কাছে কঠিন একটা বিষয়। বাজারে নতুন গাড়ির দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও, মেরামত বাবদ খরচ বাড়ছে হু হু করে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গাড়ির মেরামতের খরচ বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গাড়ির মালিকদের জন্য।
যুক্তরাষ্ট্রের কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (Consumer Price Index) অনুযায়ী, জুলাই মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সময়ে গাড়ির মেরামতের খরচ বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।
এক মাসের ব্যবধানে এত বড় উল্লম্ফন আগে দেখা যায়নি। গত এক বছরে এই খরচ বেড়েছে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর শুল্ক (tariff) বসানোয় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত, গাড়ির যন্ত্রাংশ, বিশেষ করে মেরামত করার সময় যে অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়, তার বেশির ভাগই বাইরে থেকে আমদানি করা হয়।
এই আমদানিকৃত যন্ত্রাংশের ওপর প্রায় ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়।
তবে, শুধু শুল্কই নয়, মেরামত খরচ বাড়ার পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। বর্তমানে রাস্তায় পুরনো গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে।
এর ফলে, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে। এছাড়া, দক্ষ কারিগরদের অভাব এবং গাড়ির প্রযুক্তিগত জটিলতাও খরচ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।
গাড়ি মেরামতের খরচ বাড়ার কারণ হিসেবে পুরনো গাড়ির বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, মানুষ নতুন গাড়ি কেনার পরিবর্তে পুরোনো গাড়ি সারিয়েই ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
এর ফলে, গ্যারেজগুলোতে মেরামতের চাপ বাড়ছে এবং আনুষাঙ্গিক খরচও বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গাড়ির গড় বয়সও বাড়ছে। আগে যেখানে একটি গাড়ির গড় বয়স ছিল প্রায় ১২.৬ বছর, সেখানে বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৮ বছরে।
এই সামান্য বৃদ্ধিও মেরামতের খরচ বাড়াতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। পুরনো গাড়ির মেরামত করতে প্রায়ই বড় ধরনের কাজ করতে হয়, যেমন – ইঞ্জিন পরিবর্তন, গিয়ারবক্স মেরামত, অথবা সাসপেনশন-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো দেখাশোনা করতে হয়, যেগুলোতে খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি হয়।
গাড়ির দাম এবং ঋণের উচ্চ সুদের হারও অনেককে নতুন গাড়ি কিনতে নিরুৎসাহিত করছে। ফলে, পুরোনো গাড়ি মেরামতের দিকেই ঝুঁকছেন তারা।
আগস্ট মাসে নতুন একটি গাড়ির গড় দাম ছিল প্রায় $৪৮,৩৬৫ (ডলার), যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকার বেশি (১ ডলার = ১১২ টাকা ধরে)। যদিও গত ডিসেম্বরের তুলনায় এই দাম সামান্য কমেছে, তবুও ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের তুলনায় দাম বেড়েছে প্রায় ১১,৪০০ ডলার।
গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম নিয়ন্ত্রণে না আসার পেছনে আরও একটি কারণ হলো, এই যন্ত্রাংশগুলোর দামের ওপর ক্রেতাদের সরাসরি কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
ফলে, তারা সহজে দাম যাচাই করতে পারেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাড়ির মেরামত খরচ বাড়ার পেছনে কারিগরদের অভাব একটি বড় সমস্যা। আধুনিক গাড়িতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে দক্ষ কারিগরের চাহিদাও বেড়েছে, ফলে তাদের মজুরিও বাড়ছে।
গাড়ির মেরামত খরচ বাড়ার এই প্রবণতা বাংলাদেশের বাজারেও দেখা যেতে পারে। যদিও বাংলাদেশের গাড়ির বাজার এবং মেরামতের পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ভিন্ন, তারপরও যন্ত্রাংশের আমদানি খরচ, কারিগরদের মজুরি এবং গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বৃদ্ধি পাওয়াটা স্বাভাবিক।
গাড়ির মালিকদের জন্য এখন জরুরি হলো, গাড়ির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং মেরামতের খরচ সম্পর্কে সচেতন থাকা।
এছাড়া, গ্যারেজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে, যাতে অতিরিক্ত খরচ থেকে বাঁচা যায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন