শিরোনাম: কার্বন নিঃসরণ কমাতে যুক্তরাষ্ট্রে পাইপলাইনের সাফল্য, বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয়
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে কার্বন নিঃসরণ (Carbon emission) কমানোর প্রচেষ্টা এখন সারা বিশ্বেই গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত দেশগুলো এক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করছে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা রাজ্যে একটি কার্বন নিঃসরণ বিষয়ক পাইপলাইন প্রকল্প (Carbon capture pipeline project) বেশ সাফল্য অর্জন করেছে, যা বাংলাদেশের জন্যও একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-পশ্চিম অঞ্চলে, বিশেষ করে নেব্রাস্কা, আইওয়া এবং ওয়াইমিং অঙ্গরাজ্যে ‘টాల్গ্রাস ট্রেইলব্লেজার পাইপলাইন’ (Tallgrass Trailblazer Pipeline) নামের এই প্রকল্পটি ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, ভুট্টা থেকে इथेनল (Ethanol) তৈরির সময় যে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়, তা সংগ্রহ করে মাটির নিচে জমা করা। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে সহায়তা করে।
কার্বন নিঃসরণ কমানোর এই প্রক্রিয়ার মূল বিষয় হলো, গ্যাসটিকে বায়ুমণ্ডলে মিশতে না দিয়ে তা একটি বিশেষ পাইপলাইনের মাধ্যমে ভূগর্ভে সঞ্চয় করা। টালগ্রাস এক্ষেত্রে একটি পুরনো প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনকে (Natural gas pipeline) কাজে লাগিয়েছে।
এই পাইপলাইনটি নেব্রাস্কার ১১টি এবং আইওয়ার একটি इथेনল প্ল্যান্ট থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড সংগ্রহ করে ওয়াইমিং রাজ্যের একটি স্থানে নিয়ে যায়, যেখানে এটি প্রায় ৯,০০০ ফুট গভীরে জমা করা হয়।
এই প্রকল্পের সাফল্যের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আলোচনা ও সহযোগিতা ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
টালগ্রাস কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে এবং তাদের উদ্বেগের প্রতি সম্মান জানিয়েছে। স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য একটি বিশেষ বিনিয়োগ তহবিল (Community investment fund) গঠন করা হয়েছে, যা শিশুদের উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং খাদ্য বিতরণ সহ বিভিন্ন সামাজিক খাতে সহায়তা করবে।
এই পদক্ষেপের ফলে প্রকল্পের প্রতি স্থানীয় মানুষের সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে, একই ধরনের অন্য একটি প্রকল্প, ‘সামিট কার্বন সলিউশনস’ (Summit Carbon Solutions), ভূমি অধিগ্রহণ (Land acquisition) সংক্রান্ত জটিলতা এবং স্থানীয় বিরোধিতার কারণে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
এই প্রকল্পটি পাঁচটি অঙ্গরাজ্যে বিস্তৃত একটি বিশাল পাইপলাইন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চেয়েছিল, কিন্তু জমির মালিকদের আপত্তির কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার কার্বন নিঃসরণ বিষয়ক প্রকল্পগুলোকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ধরনের কর সুবিধা দিয়ে থাকে। এর ফলে, इथेनল উৎপাদনকারীরা কার্বন নিঃসরণ কমাতে উৎসাহিত হয় এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তৈরিতে তাদের আগ্রহ বাড়ে।
এই ধরনের পদক্ষেপ একদিকে যেমন পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়তা করে, তেমনি টেকসই উন্নয়নের পথেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের প্রকল্পগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ একটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।
কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, বাংলাদেশেও কার্বন নিঃসরণ ব্যবস্থাপনার উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
এক্ষেত্রে, স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আলোচনা, তাদের উদ্বেগ দূর করা এবং প্রকল্পের সুফল সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা অপরিহার্য।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস