নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে, আর এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে প্রভাবশালী কিছু মহল কার্ডিনালদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। খবর অনুযায়ী, আসন্ন কনক্লেভের (পোপ নির্বাচনের জন্য কার্ডিনালদের গোপন বৈঠক) আগে কার্ডিনালদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে একটি বিশেষ নথি, যার মাধ্যমে তাঁদের মন জয় করার চেষ্টা চলছে।
“কলেজ অফ কার্ডিনালস রিপোর্ট” নামের এই নথিতে সম্ভাব্য পোপ পদপ্রার্থীদের প্রোফাইল তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে তাঁদের বিভিন্ন বিষয়ে অবস্থান সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। যেমন – সমকামীদের প্রতি আশীর্বাদ, নারী ডিকন নিয়োগ এবং গর্ভনিরোধের বিষয়ে চার্চের নীতি ইত্যাদি।
এই রিপোর্টের মূল উদ্দেশ্য হল, প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের প্রগতিশীল সংস্কারের থেকে ভিন্ন পথে চার্চকে চালিত করার মতো একজন পোপ নির্বাচন করা। কারণ, পোপ ফ্রান্সিসের কিছু সংস্কার রক্ষণশীলদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল।
যদিও এই রিপোর্টটি অনলাইনে সবার জন্য উন্মুক্ত, তবে এটি একটি বৃহৎ আকারের বই আকারেও তৈরি করা হয়েছে। জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত একজন কার্ডিনাল, যিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, তিনিও এই বইটির একটি কপি পেয়েছেন।
এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন দুইজন ক্যাথলিক সাংবাদিক, ব্রিটিশ নাগরিক এডওয়ার্ড পেনটিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডায়ানে মন্টানা। তাঁদের কাজ সাধারণত রক্ষণশীল ক্যাথলিক নিউজ সাইটগুলোতে দেখা যায়।
মন্টানা কনক্লেভের আগে কার্ডিনালদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের হাতে এই বই তুলে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
রিপোর্ট প্রস্তুতকারকদের দাবি, এই নথির মাধ্যমে কার্ডিনালরা একে অপরের সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবেন। তাঁদের মতে, এটি তৈরি করেছেন আন্তর্জাতিক ও স্বাধীন কিছু ক্যাথলিক সাংবাদিক এবং গবেষক। তবে, অনেকেই মনে করছেন, এই রিপোর্টের মাধ্যমে কার্ডিনালদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভ্যাটিকানের দুইজন আইনজীবী একে পক্ষপাতদুষ্ট এবং পোপ ফ্রান্সিসের নীতির বিরোধী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ, রিপোর্টে মাল্টার কার্ডিনাল মারিও গ্রেচকে “বিতর্কিত” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি বর্তমানে ক্যাথলিক চার্চে সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে, পোপ ফ্রান্সিসের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত মার্কিন কার্ডিনাল রেমন্ড বার্কের প্রশংসা করা হয়েছে।
এই রিপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করেছে ঐতিহ্যপন্থী প্রকাশনা সংস্থা সোফিয়া ইনস্টিটিউট প্রেস এবং ফ্রান্সের কার্ডিনালিস ম্যাগাজিন। সোফিয়া ইনস্টিটিউট প্রেস “ক্রাইসিস ম্যাগাজিন” প্রকাশ করে, যা পোপ ফ্রান্সিসের নীতির তীব্র বিরোধী।
রিপোর্টে অবশ্য নিরপেক্ষ থাকার দাবি করা হয়েছে। তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, “আমরা তথ্য-নির্ভর এবং নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করি, যা মৎস্যজীবীর (সেন্ট পিটার) আসনে যিনি বসবেন, তাঁর একটি সঠিক চিত্র তুলে ধরে।”
অন্যদিকে, এই ধরনের প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধে চার্চের কঠোর নিয়ম রয়েছে। পোপ দ্বিতীয় জন পলের নিয়ম অনুযায়ী, পোপ নির্বাচনের সময় কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
আসন্ন কনক্লেভে প্রভাব বিস্তারের জন্য আরও কিছু চেষ্টা চলছে। জানা গেছে, ভুক্তভোগীদের একটি দল কার্ডিনালদের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নির্যাতনের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছে। এছাড়া, সামাজিক মাধ্যমেও বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয় ছড়ানো হচ্ছে। এমনকি, কিছু প্রভাবশালী রক্ষণশীল ক্যাথলিক গোষ্ঠীও এই নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে চাইছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্ডিনালরা সহজে প্রভাবিত হওয়ার মতো নন। বোম্বের অবসরপ্রাপ্ত আর্চবিশপ কার্ডিনাল অসওয়াল্ডো গ্রাসিয়াস তাঁর সহকর্মীদের সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত “ভুয়া খবর” সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কার্ডিনালদের নিয়ে লেখা বইটি তিনি পেয়েছেন, তবে সেটি ভালোভাবে পড়েননি।
তাঁর মতে, “বইটি ভালো তৈরি হয়েছে, তবে এর তথ্য কতটা সঠিক, সেটাই দেখার বিষয়।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন