**কার্লা পেরেজ: পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে জয়ী, সবার জন্য অনুপ্রেরণা**
পাহাড় জয়ের এক অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে এগিয়ে চলা এক নারীর নাম কার্লা পেরেজ। ইকুয়েডরের এই পর্বতারোহী প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে মানুষ অসম্ভবকেও জয় করতে পারে। কার্লা পেরেজ শুধু একজন সফল পর্বতারোহীই নন, তিনি অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
কার্লা পেরেজের পর্বত জয় করা শুরু হয় ছোটবেলা থেকে। তার বাবা প্রায়ই তাদের নিয়ে ইকুয়েডরের পার্বত্য অঞ্চলে ঘুরতে যেতেন। বাবার হাত ধরে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা, প্রকৃতির অপরূপ শোভা দেখা—এগুলোই যেন কার্লার বেড়ে ওঠার পথ তৈরি করে দেয়। সময়ের সাথে সাথে পাহাড়ের প্রতি তার ভালোবাসা আরও গভীর হতে থাকে।
কার্লা পেরেজের সবচেয়ে বড়ো কৃতিত্ব হলো, তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু কয়েকটি পর্বতশৃঙ্গে অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই জয় করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে এভারেস্ট, কে-টু এবং মাকালু শৃঙ্গ। অক্সিজেন ছাড়া এত উঁচুতে ওঠা কতটা কঠিন, তা যারা পর্বত আরোহণ করেন, তারাই জানেন। যখন একজন মানুষ ৮,৩০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় ওঠেন, তখন শারীরিক ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে।
অক্সিজেনের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে আসে, কথা বলতেও কষ্ট হয়, আর সেই পরিস্থিতিতে নিজের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
কার্লা পেরেজ প্রথম লাতিন আমেরিকান নারী যিনি অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট জয় করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি প্রথম নারী যিনি একই বছরে কে-টু এবং এভারেস্ট জয় করেন। পর্বত আরোহণে তার এই সাহসীকতা ও সাফল্যের পেছনে ছিলেন ইভান ভালেজো। তিনি কার্লাকে গাইড হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন এবং কার্লার পর্বতপ্রেম ও সাহস দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
পাহাড় জয়ের পাশাপাশি কার্লা পেরেজ একটি সামাজিক প্রকল্পেও যুক্ত আছেন। ‘মাস allá দে উনা সিমা’ (Más Allá de una Cima) নামের এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী ইকুয়েডরীয়দের পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার সুযোগ করে দেন। শারীরিক সীমাবদ্ধতা জয় করে প্রকৃতির কাছাকাছি আসার এই সুযোগ অনেকের কাছেই নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
কার্লার ভাষায়, “আমি যখন কোনো পর্বত জয় করি, তখন আমার মনে হয়, আমার চাচা (যিনি সেরিব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত ছিলেন) যদি এখানে আসতে পারতেন!”
কার্লা পেরেজের স্বপ্ন আরও বড়। তিনি বিশ্বের পাঁচটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় করতে চান, তাও আবার কোনো প্রকার অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়া। এছাড়াও, তিনি হিমালয়ের দুর্গম পথে নতুন একটি পথ তৈরি করতে চান। তার এই স্বপ্নগুলো প্রমাণ করে, মানুষের ইচ্ছাশক্তি কতটা শক্তিশালী হতে পারে।
কার্লা পেরেজের মতে, পাহাড় আরোহণ করা মানে নিজের শরীরের সীমা এবং সম্ভাবনাকে নতুন করে আবিষ্কার করা। একইসঙ্গে প্রকৃতির সঙ্গে গভীর সংযোগ স্থাপন করা।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক