ভিডিও গেম খেলতেন, তিনিই এখন ‘সেন্ট’: মিলিনিয়ামের প্রথম সন্ত কার্লো অ্যাকুটিস!

ইতালির কিশোর কার্লো আকুটিস: “ঈশ্বরের প্রভাবশালী” যিনি তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা।

ক্যাথলিক চার্চের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। ভিডিও গেম খেলতে ভালোবাসতেন, পোষা প্রাণীদের নিয়ে মজার ভিডিও বানাতেন—এমন একজন সাধারণ কিশোর, কার্লো আকুটিস, যিনি কিনা ছিলেন “গডের ইনফ্লুয়েন্সার” বা ঈশ্বরের প্রভাবশালী, তিনিই এখন ‘সেন্ট’ বা সাধু।

২০০৬ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে লিউকোমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। সম্প্রতি তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়, যা ক্যাথলিক চার্চের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা।

কার্লো আকুটিস ছিলেন ইতালির নাগরিক। প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের প্রতি ছিল তার গভীর আগ্রহ।

তিনি তার এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ক্যাথলিক ধর্ম সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে ওয়েবসাইট তৈরি করেন এবং সেখানে অলৌকিক ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করতেন। এই কাজের মাধ্যমেই তিনি ‘গডের ইনফ্লুয়েন্সার’ হিসেবে পরিচিতি পান।

সাধারণত সাধুদের সনাতন চিত্র থেকে কার্লোর ছবি ছিল বেশ আলাদা। জিন্স, টি-শার্ট আর স্নিকার পরা এই কিশোরকে তরুণ প্রজন্মের কাছে খুব আপন মনে হয়।

তার এই আধুনিক জীবনযাত্রা এবং ধর্মীয় অনুভূতির কারণে সারা বিশ্ব থেকে তরুণরা তাকে অনুসরণ করে।

এই অনুষ্ঠানে কার্লো আকুটিসের সঙ্গে আরও একজন তরুণ, পিয়ের জর্জিও ফ্রাসাত্তিকেও (যিনি ১৯২৫ সালে ২৪ বছর বয়সে মারা যান) সাধু ঘোষণা করা হয়।

এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পোপ লিও ১৪। ভ্যাটিকানে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা হাজার হাজার তরুণের মধ্যে অনেকেই কার্লোর ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড ও পতাকা নিয়ে এসেছিলেন।

এই সময়ে এমন একজন তরুণের সাধু হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়াটা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, যখন ক্যাথলিক চার্চ তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের নতুন উপায় খুঁজছে।

কারণ, পশ্চিমা বিশ্বে তরুণদের মধ্যে ধর্মের প্রতি আগ্রহ কিছুটা কম দেখা যায়। তবে সাম্প্রতিক কিছু জরিপ ও তথ্যে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ‘জেনারেশন জি’–এর মধ্যে ক্যাথলিক ধর্ম নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে।

কার্লোর মা আন্তোনিয়া সালজানো মনে করেন, তাঁর ছেলের জীবন ও বিশ্বাস তরুণ প্রজন্মের কাছে, বিশেষ করে ডিজিটাল দুনিয়ার জটিলতাগুলোর মধ্যে বেড়ে ওঠা তরুণদের কাছে অনুপ্রেরণা জোগায়।

তিনি বলেন, “কার্লো একটি আশার বার্তা। সে বলে, ‘হ্যাঁ, তোমরা ভালো কাজের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারো।’ এ কারণেই পোপ ফ্রান্সিস কার্লোকে ‘গডের ইনফ্লুয়েন্সার’ বলেছেন।”

কার্লো আকুটিস ছিলেন খুবই সাধারণ একজন কিশোর। তিনি খেলাধুলা ভালোবাসতেন এবং তার মাঝে ছিল চমৎকার রসবোধ।

মা আন্তোনিয়া জানিয়েছেন, কার্লো তার পোষা বিড়াল ও কুকুরের সঙ্গে ‘স্টার ওয়ার্স’-এর মতো মজার ভিডিও বানাতেন। এমনকি তাদের কণ্ঠে বিভিন্ন চরিত্রে কণ্ঠও দিতেন।

আশ্চর্যজনকভাবে, কার্লোর ধর্মীয় জীবন ছোটবেলা থেকেই স্পষ্ট ছিল।

যদিও তিনি খুব ধার্মিক পরিবারে বেড়ে ওঠেননি, তবুও তিনি সবসময় দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বন্ধুদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন, এমনকি যাদের বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়েছে, তাদেরও সমর্থন জুগিয়েছেন।

কার্লোর মা আরও জানান, তিনিই ছিলেন ছেলের দ্বারা অনুপ্রাণিত।

মিলানে দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য তিনি পকেট মানি জমাতেন। বর্তমানে, কার্লোর সমাধি Assisi-তে (আসিজি) অবস্থিত।

সেখানে তাকে জিন্স, নাইকের জুতা এবং সাধারণ টি-শার্ট পরা অবস্থায় দেখা যায়। প্রতিদিন অসংখ্য তরুণ সেখানে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।

কার্লো আকুটিসের সাধু হওয়ার প্রক্রিয়াটি ছিল বেশ দ্রুত। সাধারণত, কোনো ব্যক্তিকে সাধু ঘোষণা করতে শতাব্দীর পর শতাব্দী লেগে যায় এবং অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

এক্ষেত্রে দুটি অলৌকিক ঘটনার প্রমাণ থাকতে হয়। কার্লোর ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটেছে।

প্রথম অলৌকিক ঘটনাটি ঘটেছিল ব্রাজিলের এক বালকের শরীরে, যেখানে জন্মগত ত্রুটির কারণে সে স্বাভাবিকভাবে খেতে পারত না।

এরপর, কোস্টারিকার এক তরুণীর বাইক দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। এই দুটি ঘটনার ক্ষেত্রে কার্লোর কাছে প্রার্থনা করার পর তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন।

তবে, কার্লো আকুটিসের এই স্বীকৃতি নিয়ে অনেকের মধ্যে ভিন্নমতও রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, তার এই ঘটনা কিছু রক্ষণশীল ধর্মতত্ত্বকে উৎসাহিত করতে পারে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *