বিখ্যাত পপ সঙ্গীত শিল্পী কার্নি উইলসন, যিনি একসময় ‘উইলসন ফিলিপস’ ব্যান্ডের সদস্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছেন। সম্প্রতি তিনি মুখ খুলেছেন তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা, যা অনেকের কাছে আজও অজানা।
বিষণ্ণতা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করতে তিনি যে সংগ্রাম করেছেন, সেই গল্প শুনিয়েছেন, সেই সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য এবং টারডিভ ডিস্কিনেসিয়া (টিডি) সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন তিনি।
কার্নি উইলসনের ভাষ্যমতে, ছোটবেলা থেকেই তিনি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। স্কুলে বন্ধুদের দ্বারা উপহাসের শিকার হওয়া এবং শারীরিক গঠনের জন্য কটূক্তি তাঁকে গভীর দুঃখ দিত, যা পরবর্তীতে বিষণ্ণতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তাঁর বাবা ব্রায়ান উইলসন, যিনি ‘দ্য বিচ বয়েজ’ ব্যান্ডের একজন সদস্য ছিলেন, এবং মা দুজনেই ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী। গানের জগৎ-এর সঙ্গে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও, এক ধরনের অস্থিরতা অনুভব করতেন কার্নি।
তিনি জানান, “আমার এখনও কিছু উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা রয়েছে। অনেক বছর আগে আমি মাদক ও মদ্যপানের আশ্রয় নিয়েছিলাম, যা সম্ভবত আমার বিষণ্ণতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।
আসলে আমি সবকিছু থেকে পালাতে চেয়েছিলাম, আমার কষ্টগুলো লুকাতে চেয়েছিলাম।”
বর্তমানে তিনি মাদক থেকে মুক্তি পেয়েছেন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগী হয়েছেন।
কার্নি মনে করেন, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করাটা জরুরি। এই প্রসঙ্গে তিনি ‘নিউরোক্রাইন বায়োসায়েন্স’-এর সঙ্গে মিলিতভাবে ‘কানেক্টিং উইথ কার্নি’ নামে একটি উদ্যোগ শুরু করেছেন।
এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হল টারডিভ ডিস্কিনেসিয়া (টিডি) রোগীদের সহায়তা করা। টিডি হলো এক ধরনের অনিচ্ছাকৃত মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার, যা কিছু মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ঔষধ সেবনের কারণে হতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, টিডি’র কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে, যেমন মুখ, হাত, বা পায়ে অনিয়ন্ত্রিত, অপ্রত্যাশিত নড়াচড়া হতে পারে।
এর ফলে সামাজিক জীবন এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হতে পারে। আমেরিকাতে প্রায় আট লক্ষ মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে ৬০ শতাংশেরই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না।
কার্নি উইলসন বলেন, তিনি টিডি’তে আক্রান্ত নন, তবে তিনি এই রোগের সঙ্গে যুক্ত মানুষের মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, “আমিও ‘বেলস প্যালসি’র মতো সমস্যার শিকার হয়েছি। তাই আমি বুঝি, যখন মুখের কোনো অংশে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, তখন কেমন লাগে।
তাই টিডি’তে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি আমার সহানুভূতি রয়েছে।”
কার্নি উইলসন মনে করেন, সঙ্গীত তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। গানের মাধ্যমে তিনি এক ধরনের নিরাময় খুঁজে পান।
বিষণ্ণতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কখনও কখনও সকালে ঘুম থেকে উঠলে মনে হয়, সবকিছু একটু ভয়ের, তখন একা থাকতে ইচ্ছে করে।
আবার এমন দিনও আসে, যখন আমি আশা অনুভব করি এবং দিনটি উপভোগ করতে চাই।
আসল কথা হল, অনুভূতিগুলো আসে আর যায়, এবং এটা স্বাভাবিক।”
কার্নি আরও বলেন, “আমি চাই, মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে ভয় না পাক।
আমি চাই, তাঁরা যেন তাঁদের দুর্বলতাগুলো স্বীকার করতে পারে এবং সাহায্য চাইতে পারে।
কারণ আমি যখন অন্যদের সাহায্য চেয়েছি, তখনই আমার আরোগ্য শুরু হয়েছিল।”
তিনি বিশ্বাস করেন, মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা খুবই সংবেদনশীল এবং সুন্দর মনের মানুষ।
তাঁদের আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
তাই সকলের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন