যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রভাবশালী সিনেটরের সঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তির সম্পর্ক এখন ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে। রিপাবলিকান সিনেটর বিল ক্যাসিডি এবং স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগের প্রধান রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের মধ্যেকার এই সম্পর্ক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা।
মূলত ভ্যাকসিন নীতিমালার প্রশ্নে মতানৈক্যের জেরেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ক্যাসিডি একসময় আশা করেছিলেন, জনস্বাস্থ্যের উপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কেনেডির সঙ্গে একটি জোট গঠন করা সম্ভব হবে। কিন্তু তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক এখন এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ফাটল স্পষ্ট।
সিনেটর ক্যাসিডি এখন প্রাক্তন সিডিসি (CDC) প্রধান সুসান মোনারেজকে নিয়ে একটি শুনানির আয়োজন করতে যাচ্ছেন। মোনারেজকে কেনেডি তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন।
শোনা যাচ্ছে, এই শুনানিতে মোনারেজ ভ্যাকসিন নিয়ে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই শুনানি রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভেদ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে রিপাবলিকানরা সাধারণত সরকারের সমালোচনা এড়িয়ে চলতেন।
সেখানে এই শুনানি কেনেডির ভাবমূর্তির ওপর আঘাত হানতে পারে এবং ভ্যাকসিন নীতি পুনর্বিবেচনার ক্ষেত্রে তাঁর প্রচেষ্টাকে আরও কঠিন করে তুলবে।
ক্যাসিডি এবং কেনেডি উভয়ের ঘনিষ্ঠজনদের মতে, এই পরিস্থিতি তাঁদের সম্পর্কের সর্বনিম্ন পর্যায়।
উভয় নেতাই বর্তমানে রাজনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছেন। মোনারেজকে বরখাস্ত করার ফলে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মী এবং বিভিন্ন দলের আইনপ্রণেতাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
কেনেডির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি মোনারেজকে ভ্যাকসিন নীতিমালায় পরিবর্তনের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন, যা বৈজ্ঞানিক প্রমাণের পরিবর্তে তাঁর ব্যক্তিগত মতামতের উপর ভিত্তি করে ছিল।
যদিও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে কেনেডির প্রতি সমর্থন জানালেও, রিপাবলিকান সিনেটরদের মধ্যে অনেকেই তাঁর প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে, সিনেটর ক্যাসিডি নিজেও এখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। কারণ, তিনি এমন একটি রাজ্যে পুনর্নির্বাচনের জন্য লড়ছেন, যেখানে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য তাঁর সমালোচনা করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউজের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আরও খারাপ হলে, তা ক্যাসিডির রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ক্যাসিডি অবশ্য কেনেডির সঙ্গে তাঁর বিরোধকে হালকা করে দেখছেন। তিনি বলছেন, মোনারেজকে নিয়ে শুনানির মূল উদ্দেশ্য হল ভ্যাকসিন সংক্রান্ত বিতর্কের আসল তথ্য তুলে ধরা।
তবে তাঁর দলের কয়েকজন সদস্য শুনানির বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন।
ক্যাসিডি ভ্যাকসিন এবং এর নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কথা বলে আসছেন।
তিনি এমন সময়ে মোনারেজকে নিয়ে শুনানির ঘোষণা করেছেন, যখন কেনেডির উপদেষ্টা প্যানেল ভ্যাকসিন সংক্রান্ত কিছু সুপারিশ বিবেচনা করছে।
এই ঘটনা কেনেডির পরিকল্পনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে লুইসিয়ানায় হুপিং কাশির প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে ক্যাসিডি কেনেডিকে এই ভ্যাকসিনের বিষয়ে সমর্থন করার জন্য আহ্বান জানান, তবে সে আহ্বানে সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগ জানিয়েছে, তারা লুইসিয়ানা রাজ্যের জনস্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে মিলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
মোনারেজ শুনানিতে অভিযোগ করতে পারেন যে, তাঁকে এমন কিছু নীতি পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি মানতে রাজি হননি।
তিনি আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে পারেন কেনেডির কিছু সিদ্ধান্তের কথা, যা বিজ্ঞানভিত্তিক ছিল না।
মোনারেজের বরখাস্তের কারণ হিসেবে জানা যায়, তিনি বাইরের একটি উপদেষ্টা প্যানেলের সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করতে রাজি হননি, যাদের অনেকেই ভ্যাকসিনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত।
এই পরিস্থিতি বিশেষ করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এটি শৈশবের টিকাগুলোর একটি বৃহত্তর পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিতে পারে, যা বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
কেনেডির উপদেষ্টা প্যানেলের একজন সদস্য জানিয়েছেন, তাঁরা শিশুদের ভ্যাকসিনগুলোর একটি ব্যাপক পর্যালোচনা করার পরিকল্পনা করছেন।
তবে আপাতত, ক্যাসিডি একাই এই খারাপ পরিস্থিতির মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন