বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সুরক্ষার বার্তা দিতে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে যিশু খ্রিষ্টের বিখ্যাত মূর্তি ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারের পাদদেশে এক ব্যতিক্রমী পরিবেশ সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সেখানকার ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মানুষজন সম্প্রতি এই অনুষ্ঠানে মিলিত হন এবং প্লাস্টিকের বোতলের ঢাকনা পুনর্ব্যবহার করে তৈরি করা একটি বিশাল কার্পেট স্থাপন করেন।
আসন্ন জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (COP30) -এর প্রাক্কালে আয়োজিত এই কর্মসূচির মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ক্যাথলিকদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ‘করপাস ক্রিস্টি’র অংশ হিসেবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর এই উৎসবে বিশেষ কার্পেট তৈরি করা হয়, যা যিশুর প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসার প্রতীক।
এবার প্রায় ৪৬০ কিলোগ্রাম পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ঢাকনা দিয়ে কার্পেটটি তৈরি করা হয়েছে। রিও ডি জেনিরোর এই বিখ্যাত মূর্তির পাদদেশকে পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার এই ধারণা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পরিবেশ ব্যবস্থাপক ও শিক্ষক মার্কোস মার্টিন্স বলেন, “এই প্লাস্টিকের ঢাকনাগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারতো। কিন্তু আমরা সেগুলোকে পুনর্ব্যবহার করে কার্পেট তৈরি করেছি।
এটি একটি ‘সার্কুলার ইকোনমি’র উদাহরণ: আমরা উপকরণ নিচ্ছি, তা পুনরায় ব্যবহার করছি এবং পরে প্রদর্শনীতে আবারও ব্যবহার করব।”
ভোরবেলা, পর্যটকদের আগমন এর আগেই কার্ডিনাল ওরানি জোয়াও টেম্পেস্তার নেতৃত্বে এই বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গুয়ানাবারা উপসাগর এবং রিও’র সুগারলোফ মাউন্টেনের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের ‘লাউদাতো সি’ (Laudato Si’) -এর কথা উল্লেখ করেন। এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ বিষয়ক বার্তায় পোপ পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন এবং একটি ‘কাঠামোগতভাবে বিকৃত’ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলেন, যেখানে ধনীরা দরিদ্রদের শোষণ করে পৃথিবীকে দূষিত করছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আসন্ন COP30 এবং জাতিসংঘের সমুদ্র সম্মেলন এর গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা বলেন, ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার এই ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
উল্লেখ্য, এই মূর্তিটি অবস্থিত তিজুকা ন্যাশনাল পার্কে। পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে এখানে কর্মশালা ও আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়েছিল।
ব্রাজিল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে আমাজনে তীব্র খরা, পান্তানালের দাবানল এবং দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা অন্যতম।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ ধরনের চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো আরও ঘন ঘন ঘটছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো, বাংলাদেশের মানুষও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এখানকার প্রধান উদ্বেগের কারণ।
তাই, ব্রাজিলের এই পরিবেশ সচেতনতামূলক কর্মসূচি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস