যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় অবস্থিত রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)-এর প্রধান কার্যালয়ে এক বন্দুকধারীর হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত শুক্রবারের এই হামলায় ১৮০ বারের বেশি গুলি চালানো হয়, যার ফলে কার্যালয়ের প্রায় ১৫০টি জানালার কাঁচ ভেঙে যায়।
কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, গুলির আঘাতে ‘বিস্ফোরণ প্রতিরোধী’ জানালাগুলো পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এতে ঘরগুলোতে কাঁচের টুকরা ছড়িয়ে পরে।
আহত কেউ না হলেও, এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। হামলাকারী ছিলেন ৩০ বছর বয়সী প্যাট্রিক জোসেফ হোয়াইট।
তিনি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের কারণে হতাশায় ভুগছিলেন এবং আত্মহত্যার কথা ভাবছিলেন বলে জানা গেছে। ঘটনার দিন বিকেলে তিনি সিডিসি’র কাছেই গুলি চালানো শুরু করেন।
পরে নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে তার মৃত্যু হয়, নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সোমবার সিডিসি’র কার্যালয় পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য বিষয়ক ফেডারেল অফিসের প্রধান রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো ঘুরে দেখেন এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
কর্মকর্তাদের মতে, জানালাগুলো মেরামত করতে এবং ক্ষতির পরিমাণ কাটিয়ে উঠতে কয়েক সপ্তাহ থেকে মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
এই ঘটনার পর সিডিসি’র কর্মীরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কর্মীদের সংগঠন বুলেটপ্রুফ কাঁচ, আরও সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী এবং জরুরি অবস্থার জন্য উন্নত পরিকল্পনার দাবি জানিয়েছে।
তারা বলছেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
সাবেক সিডিসি কর্মকর্তা স্টিফেন মনরো আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এমন ঘটনার কারণে তরুণ বিজ্ঞানীরা সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে দ্বিধা বোধ করতে পারেন। তিনি কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এদিকে, ভ্যাকসিন বিরোধী আন্দোলনের একজন নেতা রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র সম্প্রতি ফেডারেল স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর তদারকির দায়িত্ব পান। তিনি কোভিড-১৯ টিকা এবং অন্যান্য ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনার পর সিডিসি’র কর্মীরা তাদের পরিচয় গোপন রাখতে চেষ্টা করছেন। অনেক কর্মী এখন তাদের অফিসের পোশাক পরে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
কর্মীদের সংগঠন ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের স্থানীয় শাখার প্রধান ইয়োলান্ডা জ্যাকবস জানান, আগে কর্মীরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন, কিন্তু এখন তারা আতঙ্কে আছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তাদের তাদের বক্তব্যের বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ তাদের কথাগুলো মানুষ শোনে এবং সেগুলোর প্রভাব অনেকদূর পর্যন্ত যায়।
তারা ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা উচিত নয় বলেও মনে করেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন