ফিফা’র দাপটের মাঝে উয়েফা’র ভবিষ্যৎ: সেফারিin-এর নীরবতা।
ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা’র বার্ষিক সম্মেলনে এবার কিছুটা ভিন্ন চিত্র। সার্বিয়ার বেলগ্রেডে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে গতবারের মতো আলেক্সান্ডার সেফারিin-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি।
বরং আলোচনা ছিল ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো’র ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে। অনেকের মনে প্রশ্ন, উয়েফা কি তবে তার কর্তৃত্ব হারাতে চলেছে?
গত বছর প্যারিসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সেফারিin তার পদ আঁকড়ে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তিনি যেন অনেকটাই নীরব।
চতুর্থ মেয়াদের জন্য তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি। অনেকে মনে করছেন, স্লোভেনিয়ার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ পেলে হয়তো তিনি উয়েফা প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন।
তবে সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের মধ্যে স্পষ্ট কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকে এখনো দেখা যাচ্ছে না। লিজে ক্লাভেনেউস-এর নাম শোনা গেলেও, তেমন সম্ভাবনা কম বলেই মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া, ইউক্রেন ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি শেভচেঙ্কো-ও আলোচনায় ছিলেন, কিন্তু কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হতে প্রয়োজনীয় ভোট পাননি।
উয়েফা’র বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সেফারিin-এর পক্ষেই অনেকে সমর্থন যোগাচ্ছেন। নতুন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সাফল্যের কারণেও তিনি বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।
এমনকি তার বেতনও বেড়েছে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে যা ছিল প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার পাউন্ড।
তবে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে আর্থিক ও প্রতিযোগিতামূলক বৈষম্য বাড়ছে, যা একটি উদ্বেগের বিষয়। এছাড়া, সুপার লিগ এখনো দৃশ্যমান না হওয়ায় উয়েফা কিছুটা স্বস্তি বোধ করছে।
অন্যদিকে, ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো যেন অনেকটাই আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজনে তিনি যেমন অর্থ সংগ্রহ করেছেন, তেমনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাও দিয়েছেন।
এমনকি ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৪ দলের বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাবও দিয়েছেন, যা নিয়ে সেফারিin-এর সঙ্গে তার বিরোধ দেখা দিতে পারে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ফুটবলের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সে বিষয়ে সেফারিin-এর অবস্থান এখনো অনড়। তবে ইনফান্তিনো বিষয়টির দ্রুত সমাধানে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে।
গাজায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ড নিয়েও সেফারিin-কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি এড়িয়ে যান।
বর্তমান পরিস্থিতিতে উয়েফা’র জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ফিফার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা। ঘরোয়া ফুটবল ক্যালেন্ডারকে গুরুত্ব না দিয়ে আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলোর আয়োজন করতে চাইছে ফিফা।
এছাড়া, নতুন সেভেন-এ-সাইড টুর্নামেন্টের মতো বিষয়গুলোও উয়েফা’র জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
সব মিলিয়ে, উয়েফা’র ভবিষ্যৎ এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ, তেমনই ফিফার সঙ্গে ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইটাও বেশ কঠিন।
সেফারিin এই পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান