হঠাৎ কেন তারকাদের নিজস্ব মোবাইল নেটওয়ার্ক?

সেলিব্রিটিদের নামে পোশাক, প্রসাধনী থেকে শুরু করে স্ন্যাকস—বিভিন্ন পণ্যের প্রচলন তো অনেক দিনের। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্কের ব্র্যান্ডিং। সম্প্রতি, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ট্রাম্প মোবাইল’ বাজারে আসার ঘোষণার পরেই বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

এর আগে অভিনেতা জেসন বেটম্যান ও রায়ান রেনল্ডসের মতো তারকারা এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

বর্তমানে, প্রধান মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রদানকারীদের বাইরেও অনেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন। এর কারণ হলো, প্রযুক্তি এখন অনেক বেশি সহজলভ্য হয়েছে। বিশেষ করে, মোবাইল ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক অপারেটর (MVNO)-দের জন্য এই সুযোগ তৈরি হয়েছে, যেখানে তারা বিদ্যমান নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গ্রাহকদের পরিষেবা দিতে পারে।

MVNO-রা আসলে নিজেরাই তাদের নেটওয়ার্ক তৈরি করে না। তারা ভেরাইজন, এ টি অ্যান্ড টি, বা টি-মোবাইলের মতো বড় নেটওয়ার্ক প্রদানকারীদের কাছ থেকে তাদের পরিষেবা ভাড়া নেয়। এর ফলে, যেকোনো কোম্পানি সহজেই তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক চালু করতে পারে, যদি তাদের ব্যান্ডউইথ কেনার সামর্থ্য থাকে। এটি প্রধান নেটওয়ার্ক প্রদানকারীদের জন্য তাদের নেটওয়ার্ক থেকে আয়ের আরেকটি পথ খুলে দেয়।

ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্র্যানসন ১৯৯৯ সালে প্রথম MVNO হিসেবে ‘ভার্জিন মোবাইল’ চালু করেন। তবে সম্প্রতি, সেলিব্রিটিদের এই ধরনের নেটওয়ার্কের দিকে আসার প্রধান কারণ হলো— গ্রাহকদের মধ্যে প্রধান নেটওয়ার্ক প্রদানকারীদের প্রতি আনুগত্য কমে যাওয়া, ই-সিমের মতো প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, যা গ্রাহকদের জন্য নেটওয়ার্ক পরিবর্তন করা সহজ করে তোলে এবং ব্যবসার পরিচালনা সহজ করার জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রাহকরা এখন তাদের ফোনের প্রতি যতটা অনুগত, নেটওয়ার্ক প্রদানকারীর প্রতি ততটা নন। গ্রাহকরা দ্রুত নতুন কিছু চেষ্টা করতে আগ্রহী হচ্ছেন।

ট্রাম্প মোবাইল অন্যান্য MVNO-এর মতোই, প্রধান তিনটি নেটওয়ার্ক প্রদানকারীর (ভেরাইজন, এ টি অ্যান্ড টি, এবং টি-মোবাইল) তুলনায় একটি সহজলভ্য বিকল্প হিসেবে নিজেদের তুলে ধরছে। গ্রাহকরা প্রতি মাসে $47.45 (প্রায় ৫,০০০ টাকার মতো) খরচ করে আনলিমিটেড ডেটা, কল এবং টেক্সট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে, প্রথম ২০ জিবি ডেটা ব্যবহারের পর গতির কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

এছাড়াও, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং রাস্তার পাশে সহায়তার মতো সুবিধাগুলোও এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে, অভিনেতা জেসন বেটম্যান, উইল আরনেট এবং শন হেইস তাদের জনপ্রিয় পডকাস্টের নামানুসারে ‘স্মার্টলেস মোবাইল’ নামে একটি মোবাইল পরিষেবা চালু করেছেন। স্মার্টলেস মোবাইলের লক্ষ্য হলো— গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ডেটা প্ল্যান সরবরাহ করা, কারণ অনেক গ্রাহক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন।

২০১৯ সালে, ‘ডেডপুল’ অভিনেতা রায়ান রেনল্ডস এমভিএনও মিন্ট মোবাইলে বিনিয়োগ করেন। ২০২৩ সালে টি- মোবাইল ১.৩৫ বিলিয়ন ডলারে এই নেটওয়ার্কটি কিনে নেয়।

যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ টি অ্যান্ড টি, ভেরাইজন এবং টি-মোবাইল-এর মতো প্রধান নেটওয়ার্ক প্রদানকারীরা প্রভাবশালী, তবে এমভিএনও নেটওয়ার্কগুলি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওপেনসিগন্যাল নামক একটি গবেষণা সংস্থার মতে, এমভিএনওগুলো তাদের পুরনো গ্রাহকদের হারানোর তুলনায় নতুন গ্রাহক বেশি পাচ্ছে।

এমভিএনও নেটওয়ার্কগুলির প্ল্যানগুলি সব সময় প্রধান নেটওয়ার্ক প্রদানকারীদের চেয়ে সস্তা নাও হতে পারে, তবে তারা প্রায়ই আকর্ষণীয় অফার দিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, শুরুতে কয়েক মাসের জন্য কম মূল্যে পরিষেবা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে।

এই ধরনের মোবাইল নেটওয়ার্কগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তুলনামূলকভাবে নতুন হলেও, অন্যান্য দেশে এগুলো বেশ প্রচলিত। উদাহরণস্বরূপ, ওয়ালমার্ট মেক্সিকোর ‘বাইট’ এমভিএনও নেটওয়ার্কের প্রায় ১ কোটি ৯৮ লক্ষ গ্রাহক রয়েছে। ইতালিতে এসি মিলান ফুটবল দলের নামেও একটি মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে।

এছাড়াও, ‘এমভিএনও-ইন-এ-বক্স’ পরিষেবাগুলোরও বিস্তার ঘটছে। এই ধরনের কোম্পানিগুলো এমভিএনও নেটওয়ার্ক সেট আপ করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করে, যেমন—ই-সিম বিতরণ, নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস এবং বিলিং। জুনিপার রিসার্চের অনুমান অনুযায়ী, ২০২৯ সাল নাগাদ এমভিএনও-ইন-এ-বক্স পরিষেবা থেকে বিশ্বব্যাপী আয় ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

মোবাইল নেটওয়ার্কের এই নতুন ধারার সম্ভাবনা বাংলাদেশের বাজারেও দেখা যেতে পারে। এখানে, এমভিএনও মডেলের সফলতার সুযোগ রয়েছে। তবে, এর জন্য উপযুক্ত অবকাঠামো, নিয়ন্ত্রক কাঠামো এবং গ্রাহক চাহিদার দিকে নজর রাখতে হবে।

বাংলাদেশে মোবাইল নেটওয়ার্কের বাজারে এমভিএনও-এর প্রবেশ, গ্রাহকদের জন্য উন্নত পরিষেবা এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্যের সুযোগ তৈরি করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *