ফোন নেই, মুক্তি! স্কুলের এই পরিবর্তনে হতবাক সবাই!

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিদ্যালয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা: বাংলাদেশের জন্য কি কোনো শিক্ষা আছে?

বর্তমানে, যখন প্রযুক্তি আমাদের জীবনের প্রতিটি অংশে প্রবেশ করেছে, তখন ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মার্টফোনগুলি ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার মনোনিবেশে ব্যাঘাত ঘটায়, এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি বিদ্যালয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, যা এখন আলোচনার বিষয়। এই পদক্ষেপ কি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হতে পারে?

ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনের ওয়েকফিল্ড হাই স্কুলে (Wakefield High School) গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায়, ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে প্রবেশের সময় তাদের ফোন বিশেষ লকিং पाउच-এ রাখতে হয়, যা ক্লাস শেষ হওয়ার পরেই তারা আবার ফেরত পায়।

এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ ছিল, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আরও বেশি মনোযোগী করে তোলা। রাজ্যের গভর্নর, গ্লেন ইয়ংকিন (Governor Glenn Youngkin), এর আগে একটি নির্দেশ জারি করেছিলেন, যেখানে ২০২৫ সালের মধ্যে বিদ্যালয়গুলোতে ‘ফোন-মুক্ত শিক্ষা’ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

শুরুতে, এই নতুন নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। অনেক ছাত্র-ছাত্রী তাদের ফোন থেকে দূরে থাকতে অস্বস্তি বোধ করেছিল।

তবে, কয়েক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ছাত্র-ছাত্রীরা এর সুফল অনুভব করতে শুরু করে। শিক্ষকরা বলছেন, ক্লাসে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগ দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরাও স্বীকার করেছে যে, ফোন থেকে দূরে থাকার কারণে তারা ক্লাসে আরও ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে পারছে। একজন শিক্ষার্থীর মতে, ‘এটা খুবই মুক্তিদায়ক ছিল’।

তবে, এই সিদ্ধান্তের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি সমস্যা তৈরি করতে পারে।

তাছাড়া, বর্তমান ডিজিটাল যুগে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল সাক্ষরতা (Digital Literacy) শেখানোর গুরুত্ব অপরিসীম। মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে, কীভাবে তাদের প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে আরও সচেতন করা যায়, সেই বিষয়েও জোর দেওয়া উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রে, এই ধরনের পদক্ষেপ এখন বেশ সাধারণ হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে আটটি রাজ্যে বিদ্যালয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

আরও ১৫টি রাজ্যে এই বিষয়ে আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে। এই ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে, উভয় দলের নেতৃত্বই শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এই ধরনের পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন।

বাংলাদেশেও, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হওয়ার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। অনেক অভিভাবক এবং শিক্ষক মনে করেন, ক্লাসে মোবাইল ফোনের ব্যবহার শিক্ষার্থীদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায় এবং পড়াশোনার মান কমিয়ে দেয়।

যদিও, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সহজ নাও হতে পারে। কারণ, এখানে সবার জন্য স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ এখনো সীমিত।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে পারি। প্রথমত, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল সাক্ষরতার গুরুত্ব উপলব্ধি করে, শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি ব্যবহারের সঠিক দিকগুলো শেখানো উচিত। তৃতীয়ত, মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি সুষম নীতি গ্রহণ করা যেতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের ভালো এবং খারাপ উভয় দিক সম্পর্কে সচেতন করবে।

মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা একটি জটিল বিষয়। এটি একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সাহায্য করতে পারে, তেমনই অন্যদিকে ডিজিটাল যুগে তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে বাধা দিতে পারে।

তাই, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এই ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে, এর সুবিধা-অসুবিধাগুলো ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য উপযোগী একটি পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করতে হবে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *