ইউরোপের বিলাসবহুল স্কি রিসোর্টগুলোতে আসা পর্যটকদের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের জীবনযাত্রা নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। তাদের জীবনযাত্রা কি সত্যিই ঝলমলে, নাকি এর পেছনে রয়েছে কঠিন বাস্তবতা?
সম্প্রতি, এক প্রতিবেদনে এই কর্মীদের কাজের ধরন এবং তাদের জীবন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
সাধারণত, শীতকালে যখন স্কি করার জন্য পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে, তখন এইসব রিসোর্টগুলোতে কর্মী নিয়োগ করা হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশই তরুণ-তরুণী, যারা রাঁধুনি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, চালক, বেবিসিটার এবং রিসেপশনিস্টের মতো বিভিন্ন কাজ করে থাকেন।
তাদের প্রধান কাজ হল ধনী এবং প্রভাবশালী স্কিয়ারদের চাহিদা পূরণ করা।
এই কর্মীদের জীবন মোটেও সহজ নয়। ভোর সাতটায় ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয় তাদের।
পর্যটকদের জন্য খাবার তৈরি করা, তাদের সরঞ্জাম পরিষ্কার করা, ঘর গোছানো—এসবের বাইরেও তাদের স্কি করারও সুযোগ তৈরি করতে হয়। অনেক সময় তাদের থাকার জায়গা হয় খুবই সাধারণ, যেখানে বিশ্রাম নেওয়ারও পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে না।
এই কর্মীদের কাজ করার ধরন দেখলে মনে হতে পারে, তারা হয়তো বিলাসিতার মধ্যে দিন কাটায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাদের জীবন অনেক কঠিন।
যদিও তারা বিলাসবহুল পরিবেশে কাজ করে, তাদের নিজেদের জীবনযাত্রায় সেই বিলাসিতার ছোঁয়া খুব কমই লাগে। একদিকে যেমন তাদের কাজ অনেক বেশি, তেমনি বেতনও খুব বেশি থাকে না।
থাকা-খাওয়ার খরচ বাদে তাদের হাতে তেমন কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
একটা সময় পর্যন্ত এই পেশায় আসা কর্মীদের সম্পর্কে ধারণা ছিল, তারা সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। তবে বর্তমানে সেই ধারণা পাল্টেছে।
এখন বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষ এই পেশায় আসছেন। স্কিইংয়ের খরচ বাড়ার কারণে, এই পেশায় আসার ক্ষেত্রে যাদের স্কিইংয়ের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
তবে, এই পেশায় টিকে থাকতে হলে কর্মীদের ব্যক্তিত্ব এবং কাজের প্রতি মনোযোগ দিতে হয়। কারণ, অতিথিরা তাদের কাছ থেকে উন্নত মানের পরিষেবা আশা করে।
একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে—ফ্রান্সের একটি বিলাসবহুল রিসোর্টে কাজ করা এক কর্মী জানিয়েছেন, তার টিমের সদস্যরা ছিল মূলত নারী। তবে এখন এই পেশায় পুরুষের সংখ্যাও বাড়ছে।
বর্তমানে, এই পেশায় ভালো সুযোগ পাওয়ার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা হয়। নামকরা কিছু প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের জন্য যত আবেদন জমা পড়ে, তা ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেয়েও বেশি।
তবে, কর্মীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল এখানকার জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। অনেক সময় তারা পরিবারের থেকে দূরে থাকে এবং নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হয়।
তাদের কাজের চাপ, দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা এবং অতিথিদের চাহিদা মেটানো—এসব কারণে মানসিক চাপও বাড়ে।
বর্তমানে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার কারণে (Brexit) এই শিল্পের ওপর প্রভাব পড়েছে। এর ফলে, অনেক কোম্পানি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় পাসপোর্টধারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে, স্কি রিসোর্টগুলোতে কাজ করা কর্মীদের জীবন অনেক চ্যালেঞ্জিং। তাদের কাজ যেমন কঠিন, তেমনি তাদের জীবনযাত্রাও অনেক কষ্টের।
তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা এবং বাস্তবতার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন