আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) নতুন সভাপতির সামনে একাধিক কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং নতুন সভাপতি আগামী জুন মাস থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
বিদায়ী সভাপতি থমাস বাখের ১২ বছরের মেয়াদে অলিম্পিক আন্দোলনের ইতিহাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। নতুন সভাপতির ওপর এখন অনেক বড় দায়িত্ব, কারণ তাকে এমন এক সময়ে নেতৃত্ব দিতে হবে যখন বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, একবিংশ শতাব্দীতে অলিম্পিকের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, এবং লিঙ্গ পরিচয় ও সমতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।
নতুন সভাপতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রাশিয়া ও বেলারুশের অ্যাথলেটদের অলিম্পিকে ফেরানোর বিষয়টি। ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসনের পর, আইওসি উভয় দেশের অ্যাথলেটদের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
তবে, পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত কিছুটা শিথিল করে, ২০২৩ সালের মার্চে কিছু শর্তসাপেক্ষে তাদের নিরপেক্ষ প্রতিযোগী হিসেবে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়। প্যারিস অলিম্পিকে (২০২৪) মোট ৩২ জন অ্যাথলেট – যাদের মধ্যে ১৭ জন রাশিয়ান এবং ১৫ জন বেলারুশিয়ান – নিরপেক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন।
বাখ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অ্যাথলেটদের স্বার্থকে সবার আগে বিবেচনা করতে হবে, তাদের জাতীয়তা বা চলমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নয়।
এর বাইরে, ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক গেমসের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য ক্ষমতা গ্রহণও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাখ যদিও ট্রাম্পের সঙ্গে আইওসির সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করেছেন এবং আশা করেন যে লস অ্যাঞ্জেলেস “যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রীড়াপ্রেমী দেশ হিসেবে তুলে ধরবে”, তবে ট্রাম্পের সরাসরি এবং বিতর্কিত নেতৃত্ব শৈলী এই সম্পর্ককে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারে।
ট্রাম্প সম্ভবত অন্যান্য দেশের নেতাদের চেয়ে গেমসের ওপর নিজস্ব প্রভাব বিস্তার করতে চাইবেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে, তিনি সম্ভবত ২০২৮ সালের ১৪ জুলাই গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে পারেন।
এছাড়াও, ডিএসডি (Differences in Sex Development) এবং ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত আইওসি এবং এর আন্তর্জাতিক ফেডারেশনগুলোর মধ্যে কোনো সুস্পষ্ট, সমন্বিত কাঠামো নেই। এই বিষয়ে বিভিন্ন ফেডারেশন তাদের নিজস্ব নিয়ম তৈরি করতে পারে।
কিছু ফেডারেশন, যেমন বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স, ডিএসডি অ্যাথলেটদের জন্য কঠোর নিয়ম তৈরি করেছে, আবার কেউ কেউ, যেমন বিশ্ব রাগবি, ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের নারী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে নিষিদ্ধ করেছে। এই ধরনের ভিন্ন ভিন্ন নিয়মের কারণে খেলোয়াড় এবং সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
নতুন সভাপতির আট বছরের মেয়াদে, ২০৩৩ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গেমসগুলোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনা করা হবে।
২০৩৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজনের জন্য এরই মধ্যে কাতার, সৌদি আরব, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে, অলিম্পিক আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মের রুচি অনুযায়ী পরিবর্তন আনারও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ২০২৭ সালে রিয়াদে প্রথম অলিম্পিক ই-স্পোর্টস গেমস অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দর্শকদের কাছে গেমস পৌঁছে দেওয়ার জন্য আইওসিকে প্রযুক্তিগত রূপান্তরকে উৎসাহিত করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন