আলো ঝলমলে জীবন থেকে অন্ধকারে: চার্লি শিনের বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি!

হলিউডের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা, চার্লি শিনের জীবনযাত্রা নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আত্মজীবনী ‘দ্য বুক অফ শিন’। বইটিতে উঠে এসেছে তাঁর অভিনয় জীবন, মাদকাসক্তি, ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং জীবনের নানা উত্থান-পতনের গল্প।

এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেতার জীবনের এই দিকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

চার্লি শিনের আসল নাম কার্লোস ইরউইন এস্টেজ। তিনি ১৯৬০-এর দশকে, অভিনেতা মার্টিন শিনের পরিবারে জন্মগ্রহন করেন।

বাবার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। ১৯৮৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘প্লাটুন’-এর মাধ্যমে অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তিনি।

১৯৮৭ সালে ‘ওয়াল স্ট্রিট’ ছবিতেও তিনি অভিনয় করেন, যা তাঁর খ্যাতি আরও বাড়িয়ে তোলে।

পরবর্তীকালে টেলিভিশনেও তিনি জনপ্রিয়তা পান, বিশেষ করে ‘টু অ্যান্ড আ হাফ মেন’ সিরিয়ালে অভিনয়ের মাধ্যমে। এই সিরিয়ালের জন্য তিনি প্রতি পর্বে প্রায় ১.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পারিশ্রমিক পেতেন, যা তাকে টেলিভিশন জগতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতাদের একজন করে তুলেছিল।

তবে খ্যাতির শিখরে আরোহণের এই পথটি খুব মসৃণ ছিল না। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে তিনি মাদক ও মদে আসক্ত হয়ে পড়েন।

একাধিকবার তাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে যেতে হয়, কিন্তু সেগুলির কোনোটিই খুব একটা কাজে আসেনি। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন।

বিবাহ বিচ্ছেদ, এইচআইভি পজিটিভ ধরা পড়া—এসব ঘটনা তার জীবনকে আরও কঠিন করে তোলে।

শিনের আত্মজীবনীতে তাঁর জীবনের এই কঠিন দিনগুলোর কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি কীভাবে মাদকাসক্ত হয়েছিলেন, কীভাবে তা তাঁর অভিনয় জীবনকে প্রভাবিত করেছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন।

এমনকি, একবার তো তিনি একটি সিনেমার শুটিংয়ের সময় কোকেন নেওয়ার কারণে প্রায় বরখাস্ত হতে যাচ্ছিলেন।

মাদকাসক্তির কারণে ‘টু অ্যান্ড আ হাফ মেন’ সিরিয়ালের কাজও বন্ধ হয়ে যায়, এবং এক পর্যায়ে তাকে চুক্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য চার্লি শিন বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছেন।

২০১৭ সালে তিনি মাদক এবং অ্যালকোহল ত্যাগ করে নতুন জীবন শুরু করেন। বইটিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, কীভাবে তিনি অবশেষে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

তাঁর সন্তানদের কথা ভেবেই তিনি এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন।

এছাড়াও, বইটিতে শিনের ব্যক্তিগত জীবন এবং সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। হলিউডের ‘হলিউড ম্যাডাম’ নামে পরিচিত হাইডি ফ্লিসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা, প্রথম স্ত্রী ডোনা পিলের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ, অভিনেত্রী ডেনিস রিচার্ডসের সঙ্গে সম্পর্ক এবং পরবর্তীতে ব্রুক মুয়েলারের সঙ্গে বিয়ে ও বিচ্ছেদের ঘটনাগুলোও বইটিতে স্থান পেয়েছে।

নিজের আত্মজীবনী নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অভিনেতা জানান, শৈশবে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার ঘটনা তাঁর জীবনের গতিপথ তৈরি করে দিয়েছিল।

তিনি বলেন, জীবনের এই পর্যায়ে এসে, অতীতের সেই কঠিন দিনগুলো থেকে দূরে থেকে, তিনি তাঁর জীবনকে নতুন করে উপলব্ধি করতে পেরেছেন।

বর্তমানে চার্লি শিন সুস্থ জীবন যাপন করছেন এবং তাঁর অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে পথ চলতে শুরু করেছেন।

তাঁর এই আত্মজীবনী সেই কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *