যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক, জেপি মর্গান চেজ, তাদের জনপ্রিয় ‘স্যাপায়ার রিজার্ভ’ ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াচ্ছে। ভ্রমণ ও ডাইনিং-এর সুবিধা প্রদানকারী এই কার্ডের বার্ষিক ফি এখন থেকে ৭৯৫ মার্কিন ডলার (যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৮৮ হাজার টাকার সমান) নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগে এই ফি ছিল ৫৫০ ডলার (প্রায় ৬০ হাজার টাকা)। মূলত, উচ্চ-খরচকারী তরুণ প্রজন্মের গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এই কার্ড মূলত তাদের জন্য, যারা নিয়মিত ভ্রমণ করেন এবং রেস্টুরেন্টে খেতে ভালোবাসেন। নতুন ফি’র বিনিময়ে কার্ডধারীরা বছরে প্রায় ২,৭০০ ডলারের সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, তাদের নিজস্ব পোর্টালের মাধ্যমে ফ্লাইট ও হোটেল বুকিং-এর ক্ষেত্রে আরও বেশি পয়েন্ট অর্জনের সুযোগ। এছাড়াও, কার্ডটিতে বিদ্যমান ৩০০ ডলারের ভ্রমণ ক্রেডিট সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
নতুন সুবিধার মধ্যে রয়েছে বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে ব্যবহারের জন্য ৫০০ ডলারের ক্রেডিট, যা ‘দ্য এডিট’ প্রোগ্রামের অংশ। এছাড়া, ‘স্যাপায়ার রিজার্ভ এক্সক্লুসিভ টেবিল’ প্রোগ্রামের অধীনে ডাইনিং রিজার্ভেশনের জন্য ৩০০ ডলারের ক্রেডিট পাওয়া যাবে।
টিকিট কেনার জন্য স্টাবহাবে ৩০০ ডলার এবং অ্যাপল মিউজিক ও অ্যাপল টিভিতে ২৫০ ডলার পর্যন্ত বার্ষিক ক্রেডিট পাওয়া যাবে। পূর্বে, এই কার্ডে প্রতি মাসে ১০ ডলার করে লিফট রাইডের জন্য বছরে ১২০ ডলার ক্রেডিট পাওয়া যেত।
জেপি মর্গান চেজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন ‘স্যাপায়ার রিজার্ভ’ কার্ড তৈরি করা হয়েছে গ্রাহকদের ভ্রমণ, ডাইনিং, বিনোদন এবং উন্নত পরিষেবা প্রদানের কথা মাথায় রেখে। ব্যবসায়ীদের জন্যেও একই ফি’তে একটি নতুন ‘স্যাপায়ার রিজার্ভ’ কার্ড চালু করা হচ্ছে, যেখানে জিপরিক্রুটার ও গুগল ওয়ার্কস্পেসের মতো সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।
নতুন বার্ষিক ফি এবং অন্যান্য সুবিধাগুলো আগামী ২৬ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। কার্ডের ডিজাইনও পরিবর্তন করা হয়েছে, যা ‘স্যাপায়ার রিজার্ভ’ ব্র্যান্ডের আধুনিকতাকে প্রতিফলিত করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, জেপি মর্গান চেজ ‘স্যাপায়ার’ কার্ডকে একটি লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে, যা আমেরিকান এক্সপ্রেসের প্রিমিয়াম ক্রেডিট কার্ডগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। বিশেষ করে বিমানবন্দর লাউঞ্জ সুবিধার ক্ষেত্রে, জেপি মর্গান চেজ নিউ ইয়র্ক, বোস্টন এবং ফিনিক্সের মতো প্রধান শহরগুলোতে তাদের লাউঞ্জ খুলেছে।
এছাড়াও, প্যারিসে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক এবং মায়ামির আর্ট বেসেলের মতো অনুষ্ঠানে কার্ড সদস্যদের জন্য বিশেষ সুযোগ তৈরি করে তারা তরুণ প্রজন্মের গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, আমেরিকান এক্সপ্রেসও তাদের ‘প্ল্যাটিনাম’ কার্ডগুলোতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘোষণা করেছে, যা একই ধরনের গ্রাহকদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে। তারা তাদের কার্ডগুলোতে ‘এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ’ করার কথা জানিয়েছে, যদিও বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
আমেরিকান এক্সপ্রেসের এই কার্ডগুলোর বার্ষিক ফি ২০১৯ সাল থেকে ৬৯৫ ডলার (প্রায় ৭৬ হাজার টাকা)।
এই ধরনের প্রিমিয়াম ক্রেডিট কার্ডগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণ হলো, গ্রাহকদের জন্য আকর্ষণীয় পুরস্কার ও সুবিধা প্রদান করা। বিশেষ করে উন্নত জীবনযাত্রার অন্বেষণে থাকা মানুষের কাছে এই কার্ডগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়।
বাংলাদেশেও যদি এই ধরনের কার্ড চালু হয়, তবে উচ্চ আয়ের মানুষের মধ্যে এর চাহিদা তৈরি হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন