নতুন প্রজন্মের চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’ নিয়ে হইচই, কতটা সফল হল ওপেনএআই?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) বা এআই প্রযুক্তির জগতে সাড়া জাগানো চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’র নতুন সংস্করণ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। প্রস্তুতকারক সংস্থা ওপেনএআই (OpenAI) দাবি করেছিল, নতুন এই সংস্করণটি ‘পিএইচডি’ (PhD) পর্যায়ের মানুষের মতো বুদ্ধি সম্পন্ন।
কিন্তু বাজারে আসার পরেই এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতেও এই চ্যাটবটটি হিমশিম খাচ্ছে। খবরটি জানিয়েছে সিএনএন।
ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান (Sam Altman) এই নতুন সংস্করণটিকে আইফোনের রেটিনা ডিসপ্লের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তাঁর মতে, এটি আগের চেয়ে অনেক উন্নত।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, চ্যাটবটটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নামের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি ভুল করেছে। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের একটি মানচিত্র চিহ্নিত করতেও এটি ব্যর্থ হয়েছে। এই ধরনের ভুলগুলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্যর্থতা প্রযুক্তিটির সীমাবদ্ধতাকেই তুলে ধরে। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক: চ্যাটবটটিকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ১২ জন প্রেসিডেন্টের ছবি ও নামসহ একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়, তখন এটি নয়জনের ছবি দেখায় এবং সেখানে ‘জর্জ ওয়াশিংগিন’ (Gearge Washingion)-এর মতো ভুল বানান ব্যবহার করে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের মানচিত্র চিহ্নিত করতে গিয়েও এটি ‘ইয়ারগিনিয়া’ (Yirginia)-এর মতো ভুল রাজ্যের নাম দেখিয়েছে।
এই ঘটনার পর, ওপেনএআইকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। ব্যবহারকারীরা নতুন সংস্করণের দুর্বলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অনেকে আগের সংস্করণ, যা ছিল GPT-4o, সেটি ফিরিয়ে আনার জন্য আবেদন করেছেন। ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, নতুন সংস্করণে আগের মতো আকর্ষণীয়তা নেই।
সমালোচকদের মতে, ওপেনএআই এই নতুন সংস্করণ তৈরি করতে গিয়ে তাদের ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। প্রযুক্তি বিষয়ক সমালোচক গ্যারি মার্কাস (Gary Marcus) বলেছেন, ‘আমার মনে হয় না, ওপেনএআই এমন কিছু করবে যা তাদের ব্র্যান্ডের ক্ষতি করবে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ওপেনএআই এখনো লাভজনক হতে পারেনি এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যা ধরে রাখতে তারা দাম কমাচ্ছে, এছাড়াও প্রতিযোগীতার কারণে তাদের কর্মীরাও অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছেন।
এআই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা কোম্পানিগুলো প্রায়ই তাদের তৈরি করা মডেলগুলোর সক্ষমতা নিয়ে বড় বড় কথা বলে থাকে। তারা প্রায়ই পরীক্ষার ফলাফলের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়, যা তাদের তৈরি করা পণ্যগুলোর বাস্তব ব্যবহারের তুলনায় অনেক আলাদা।
তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআইয়ের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি এবং তার বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে এখনো অনেক ফারাক রয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, ওপেনএআই তাদের আগের মডেলগুলো ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। একইসঙ্গে, তারা নতুন সংস্করণের সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করছে বলে জানিয়েছে।
এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এআই প্রযুক্তি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এর উন্নতিতে অনেক সময় লাগবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, সেখানে এআইয়ের নির্ভরযোগ্যতা এবং নির্ভুলতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
ভুল তথ্য পরিবেশন করলে তা শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন