চ্যাটজিপিটিকে ‘ধন্যবাদ’ জানালে এত টাকা খরচ? শীর্ষকর্তার বিস্ফোরক মন্তব্য!

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বর্তমানে বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে। মানুষের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, সব ক্ষেত্রেই এর প্রভাব বাড়ছে।

ChatGPT-এর মতো চ্যাটবটগুলি আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে বা কাজ করতে সাহায্য করে। কিন্তু এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পেছনে রয়েছে বিশাল পরিমাণ বিদ্যুতের খরচ, যা পরিবেশের উপর ফেলছে মারাত্মক প্রভাব।

সম্প্রতি, OpenAI-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান জানিয়েছেন, ChatGPT-কে ‘অনুগ্রহ করে’ বা ‘ধন্যবাদ’ বলার কারণে তাঁদের কয়েক কোটি ডলার খরচ হয়, যা মূলত এই এআই মডেলগুলি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের কারণে হয়ে থাকে।

বিষয়টি হয়তো অনেকের কাছে সামান্য মনে হতে পারে, কিন্তু এর গভীরতা অনেক। একজন গবেষকের মতে, ChatGPT-তে একটি সাধারণ প্রশ্ন করতে যে পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, তা দিয়ে একটি সাধারণ বাতি প্রায় ২০ মিনিটের জন্য জ্বালানো সম্ভব।

কোটি কোটি মানুষ যখন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তখন বিদ্যুতের চাহিদা বিপুল পরিমাণে বাড়ে। এর ফলস্বরূপ, ডেটা সেন্টারগুলি, যেখানে এই এআই মডেলগুলি তৈরি ও পরিচালনা করা হয়, সেগুলির বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়, যা পরিবেশের জন্য উদ্বেগের কারণ।

গুগল তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ ৪৮% বৃদ্ধি পেয়েছে, যার প্রধান কারণ হলো এআই ডেটা সেন্টারগুলির বিদ্যুৎ খরচ বৃদ্ধি।

মাইক্রোসফটের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। তাদের নিজস্ব জেনারেটিভ এআই প্ল্যাটফর্ম Copilot চালু হওয়ার পর থেকে, ২০২০ সালের তুলনায় গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ২৯% বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই মডেলগুলি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। কারণ, এর ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের উপর খারাপ প্রভাব পড়ছে, তেমনই বাড়ছে কার্বন নিঃসরণ।

জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে, এআইয়ের এমন ব্যবহার একটি উদ্বেগের কারণ।

তবে, এআইয়ের সঙ্গে কিভাবে কথা বলা হচ্ছে, সেটিরও একটা গুরুত্ব আছে। অনেকে মনে করেন, ভদ্রভাবে কথা বললে এআই আরও ভালোভাবে সাড়া দেয়।

উদাহরণস্বরূপ, মাইক্রোসফটের একটি গবেষণা কেন্দ্রে বলা হয়েছে, polite language বা বিনয়ী ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে এআইয়ের কাছ থেকে আরও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। কারণ, এআই আমাদের কথার ধরন থেকে শিখছে।

ডিসেম্বর ২০২৪-এ প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকার প্রায় ৬৭% এআই ব্যবহারকারী চ্যাটবটগুলির সঙ্গে ভদ্রভাবে কথা বলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, এটা ভালো ব্যবহার এবং এটি করা উচিত।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিষয়টি বিবেচনা করি, তাহলে এর গুরুত্ব আরও বাড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।

আমাদের এখানে বিদ্যুতের চাহিদা সবসময় বেশি থাকে এবং পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তাই, এআইয়ের ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন হতে হবে, যাতে পরিবেশের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে পারি।

নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের দিকে জোর দেওয়া এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারি।

তথ্য সূত্র: People

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *