হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচাতে পারে দুটি সহজলভ্য ওষুধ, গবেষণায় নতুন দিশা।
হৃদরোগ বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীর পুনরায় হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সম্প্রতি, যুক্তরাজ্য এবং সুইডেনের একদল গবেষক জানিয়েছেন, দুটি সহজলভ্য ওষুধ— স্ট্যাটিন এবং ইজেটিমিবি— একসঙ্গে ব্যবহার করে হৃদরোগের রোগীদের জীবন বাঁচানো সম্ভব। এই গবেষণা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন আশা জাগিয়েছে।
গবেষণাটি করেছেন লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ এবং সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাঁদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাকের শিকার রোগীদেরকে স্ট্যাটিন এবং কোলেস্টেরল-হ্রাসকারী ওষুধ ইজেটিমিবি একসঙ্গে দিলে পরবর্তী হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা মৃত্যুঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
অধ্যাপক কৌশিক রায়, যিনি ইম্পেরিয়ালের পাবলিক হেলথ স্কুলের সঙ্গে যুক্ত, এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, কম দামের দুটি ওষুধ একসঙ্গে প্রয়োগ করে রোগীদের জীবন বাঁচানো যেতে পারে এবং পুনরায় হৃদরোগের আক্রমণও কমানো সম্ভব।
গবেষণায়, ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হওয়া প্রায় ৩৬,০০০ সুইডিশ রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গবেষকরা দেখেছেন, হার্ট অ্যাটাকের ১২ সপ্তাহের মধ্যে যাদের স্ট্যাটিন এবং ইজেটিমিবি দেওয়া হয়েছে, তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেছে এবং নতুন করে হৃদরোগের ঘটনা ও মৃত্যুর ঝুঁকি কমেছে।
অধ্যাপক রায় আরও যোগ করেন, “চিকিৎসা বিষয়ক নির্দেশিকাগুলোতে সামান্য পরিবর্তন এনে আমরা রোগীদের জন্য বড় ধরনের উপকার করতে পারি।
বর্তমানে, হৃদরোগের চিকিৎসার এই পদ্ধতিটি সব জায়গায় অনুসরণ করা হয় না। তবে, গবেষকরা মনে করেন, এই দুটি ওষুধ— স্ট্যাটিন এবং ইজেটিমিবি— সহজলভ্য এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে পাওয়া যায়।
একজন রোগীর জন্য বছরে এর খরচ প্রায় ৪৭,০০০ টাকার (৪০০ পাউন্ডের হিসেবে)। সুইডেনের স্কোনে ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের সিনিয়র কার্ডিওলজি কনসালট্যান্ট এবং লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মার্গারেট লিওসডত্তির আশা প্রকাশ করে বলেন, এই গবেষণা বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা নির্দেশিকায় পরিবর্তন আনবে এবং এর মাধ্যমে অনেক মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশেও হৃদরোগ একটি গুরুতর সমস্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো হৃদরোগ। তাই, এই গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশের রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
তবে, কোনো ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান