চেলসি প্রদর্শনী: বাগানে অভিনবত্ব! বিস্মিত হবেন!

শিরোনাম: জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে: বাগান হোক পরিবেশ-বান্ধব, পথ দেখায় চেলসি ফ্লাওয়ার শো।

লন্ডনের রয়্যাল হসপিটাল গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহ্যপূর্ণ চেলসি ফ্লাওয়ার শো। প্রতি বছরই এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে উদ্যানচর্চা এবং বাগান বিষয়ক নতুন ধারণা ও শৈলীর উন্মোচন করা হয়।

এবারের শো’টির মূল আকর্ষণ ছিল পরিবেশ-বান্ধব এবং টেকসই বাগান তৈরির ধারণা। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে কীভাবে প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাগান তৈরি করা যায়, সেই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে এবারের প্রদর্শনীতে।

প্রদর্শনীতে দেখা গেছে, কীভাবে বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে সার তৈরি করা যায়। ম্যাথিউ বাটলার এবং জশ পার্কার-এর ডিজাইন করা ‘গার্ডেন অফ দ্য ফিউচার’ -এ ছিল বিশেষ ধরনের একটি টয়লেট, যা মানব বর্জ্যকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে জৈব সার (biochar compost) তৈরি করে।

এই সার ব্যবহার করে সবজি চাষ করা সম্ভব। এছাড়াও, বাগানে সৌর প্যানেল বসিয়ে সেচ পাম্প চালানোর ব্যবস্থাও ছিল, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট খরা পরিস্থিতির মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে।

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে, যখন অনেক দেশেই পানির অভাব দেখা যাচ্ছে, তখন খরা-সহিষ্ণু ফসলের ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চেলসি ফ্লাওয়ার শো’তে প্রদর্শিত হয়েছে এমন সবজি ও শস্য, যা কম পানি ব্যবহার করে ভালো ফলন দিতে পারে।

শস্যের মধ্যে ছিল ছোলা এবং মিষ্টি আলু। যুক্তরাজ্যের অনেক কৃষক এখন মিষ্টি আলু চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

শুধু গাছপালা বা সবজি নয়, পোষ্যদের জন্যও বিশেষ স্থান তৈরি করার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। মন্টি ডন নামের একজন বাগান বিশেষজ্ঞ তার বাগানে কুকুরদের জন্য উপযুক্ত স্থান তৈরি করেছেন।

সেখানে ছিল নরম ঘাস, যা কুকুরের খেলার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং এমন কিছু ফুল গাছ, যা তাদের জন্য ক্ষতিকর নয়। এমনকি, তাদের সাঁতার কাটার জন্য পুকুরও ছিল।

এই ধরনের বাগানগুলো প্রমাণ করে, কীভাবে প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে পোষ্যদের সঙ্গে সময় কাটানো যায়।

অন্যদিকে, পাখির প্রতি ভালোবাসার নিদর্শনও দেখা গেছে এই প্রদর্শনীতে। ‘সংবার্ড সারভাইভাল গার্ডেন’-এ পাখির আবাসস্থল তৈরির জন্য ঝোপঝাড় এবং বিভিন্ন ধরনের ফল গাছের ব্যবহার করা হয়েছে।

এছাড়া, এমন কিছু গাছ লাগানো হয়েছে, যেগুলোতে পাখির খাবার পাওয়া যায়।

চেলসি ফ্লাওয়ার শো-এর এই আয়োজন প্রমাণ করে, বাগান শুধু সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নয়, বরং পরিবেশের সুরক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশের মতো একটি দেশে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রতিনিয়ত অনুভূত হচ্ছে, সেখানে এই ধরনের ধারণা খুবই প্রাসঙ্গিক। সীমিত জলের ব্যবহার করে কীভাবে সবজি ও ফল উৎপাদন করা যায়, পোষ্যদের জন্য নিরাপদ স্থান তৈরি করা যায় এবং পাখির আবাসস্থল তৈরি করে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা যায়, সে সম্পর্কে এই প্রদর্শনী থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

প্রদর্শনীতে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী কেট ব্লানচেট, উপস্থাপিকা ক্যারল ভোরডারম্যান, অভিনেতা ডেভিড টেনান্ট এবং জুডি ডেঞ্চের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *